ট্রেনটা কখন যেন শ্বাপদের মতো চুপিসাড়ে এসে দাঁড়িয়েছে।
সারা রাস্তা বয়ে আনা বোঝাটা পাশে সরিয়ে মন চায় –
আরও একটু স্পর্শ।
সেই আমি – আর – তুমি;
ঠিক হারিয়ে যাওয়ার আগে –
নতুন দিনের মতো।
তোলপাড় করে ওঠে আমার নিটোল বুনোট।
ফিস ফিস করে জানান দেয় – শ্বাপদটা –
সময় শেষ হওয়ার যন্ত্রনা।
ঠিক সেই সময় দেখি –
তুমি তখনও দরকষাকষিতে ব্যস্ত –
আরও দু চার পয়সার সস্তা সাশ্রয়।
এইভাবেই –
ধীরে ধীরে কুয়াশায় মধ্যবিত্ত প্রেম –
মধ্যবর্তী – হয়ে যায়।
শুধু ঝাপসা আলোয় হয়তোবা দু ফোঁটা জলের রেখা –
দু হাত শূন্যে তুলে গর্জে ওঠে –
অপূর্ণতা যদি কিছু থেকেও যায় –
তা কিছু বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো নয় -।
বাঁচবি জলে মরবি ধরে মাটি ।
মরবি জলে বাঁচবি ধরে মাটি ।
এই জলের ক্রমে এই ধরার ক্রমে ।
তাই বলে থাকবি জলে আসবি না স্থলে
থাকবি স্থলে নামবি না জলে ।
ওরে পোড়ামুখো ! যাবি কোন মুখো !
একদিন না একদিন ভয় উতরে নামতে হবে জলে
কখন কে জানে কোন যে ঋতুর খুঁটির অবতলে
এক নিমেষে অন্ধ বধির নগ্নশরীর শুতে যায় বলে ।
মাটির টুকরো নিয়ে আজ দলাদলি মারামারি ।
জলের দাগ নিয়ে কাল ভাগাভাগি কাড়াকাড়ি ।
অযথা দু প্রান্তের রক্ত মাংস মানুষধারী
যদিও কাল জল মাটির জীবন হাজারদুয়ারি।
ওরে পোড়ামুখো ! যাবি কোন মুখো !
একদিন তো যেতে হবে এই মাটিতে এই জলে
সব জমা খরচ ফেলে শব শরীর মাটির ঢেলায় দলে
শেষ যাত্রা চিতায় জ্বলে অজর জলের স্রোতের কবলে ।
হায় রে শিশু – হায় রে কিশোর
কোথায় জ্বলে – তোর ঘরদোর ।
কোথায় পড়ে আম্মি তোদের
কোন নদীতে হয় গো কবর
কোন বেয়নেট – ছিন্ন করি
আব্বু তোদের – বেহেস্ত পাড়ি ।
কণ্ঠ তোদের – রুদ্ধ করি
পালিয়ে যা তুই সে দেশ ছাড়ি।
তবুও যদি তর্ক করিস
আগুন তবে – পুড়িয়ে মারিস –
যুগ যুগান্তে – একটাই দল
যেভাবেই হোক – ক্ষমতা দখল –
এই ধর্ম – এ দেশ আমার
এই পৃথিবী আবার আমার -।
এই ধর্ম – এ দেশ আমার
এই পৃথিবী আবার আমার –
এতটা আকাশ – এতটা বাতাস –
এই জমিটা – ঐটুকু শ্বাস –
সব টুকু চাই – সব টুকু চাই –
নইলে এবার – শব টুকু চাই –
আমার কালি – নিয়ম আমার
আমার চাবুক – বলবে এবার –
তোর দুনিয়া? – ছিলই কবে !
টুকরো রুটি – এতেই হবে –
(তোদের) অতীত যতই – হোক পুরানো
নয় আমাদের – নয় ওদেরও –
গুনতিতে যে – অনেক বড় –
এই নিয়মেই – আমরা দড় – ।
এই নিয়মেই – চলতে হবে
এই নিয়মেই – মরতে হবে।
(এই) নিয়ম মেনেই – মৃত্যু মিছিল
যুগ যুগান্তে – হয় না শিথিল -।
(Please Note: We are not intended to heart any religious or any community. They might come significantly into purview. If so, we are extremely sorry for that.)
মেয়েটা যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিল-
বাবার দিকে একটু লক্ষ্য রেখো মা
ভাই যেন ঠিকঠাক পড়াশুনা করে;
আরও বলেছিল- তোমাদের ছাড়া থাকতে পারবো না আমি…
ওর বিদায় লগ্নে –
শঙ্খ আর উলুধ্বনির তরঙ্গের সাথে
ভেসে গিয়েছিল আমাদের অব্যক্ত ব্যাথা দুর-দুরান্তে!
ভাবতে অবাক লাগে-
একটা মেয়ে রাতারাতি কেমন করে
এক নারীতে পরিনত হয়।
মেয়েটার কথামত লক্ষ্য করতে গিয়ে দেখেছি
লোকটা ক্রমশ পাথরের মতো নির্বাক – নিরুৎসাহ,
জীবনের সব সুখ আনন্দ …
গ্রীষ্মের ডোবা পুকুরের জলের মতো
হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।
ছেলেটা – ছেলেটা দিদির সংসারে সুখের জন্য
পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে
একটা মুদীর দোকানে কাজ করে।
মনে পড়ে-
ওরা যখন অষ্টমঙ্গলায় এসেছিল-
দারুন উৎফুল্ল ছিল মেয়েটা,
খুশীতে মুখখানি যেন পুর্নিমা চাঁদের মতো উজ্জ্বল
পাহাড়ী ঝর্নার মতো কল্লোলিনী সে।
যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিল-
আমি খুব ভাল আছি মা।
তারপর ছ’মাসের মাথায় যখন এলো-
যেন চাঁদের গায়ে ছাপ ছাপ অন্ধকার
অনেকটা মলিন – ম্রিয়মান সে।
আমার কানপাশা জোড়া দেখতে না পেয়ে বলেছিল-
ওদের জন্য আর কত করবে মা?
যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিল-
ওখানে আর ভাল লাগে না…
এক বছরের মাথায় মেয়েটা একাই এসেছিল;
তখন একেবারে বিধ্বস্ত-হতাশ,
লাল নীল হলুদ পছন্দের কয়েকটা শাড়ী
কিছু গয়না রেখে দিয়ে বলেছিল-
ও গুলো আর ভাল লাগে না মা ।
যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিল-
আর কবে আসবো জানি না…
মেয়েটা আর কোনদিন ফিরে আসেনি-
শুধু একটা ফোন এসেছিল…
মাঝরাতে কিংবা ভোরের আগে।
সেদিন হয়তো আর ভোর হয়নি-
ভোরের পাখীগুলি আর কলোরব করেনি।
শুধু একটা কাক ডাকছিল ছাদের কার্নিশে
বুকটা আমার ব্যাথায় ভেঙে যাচ্ছিল!
মেয়েটার জীবনে আর কোনদিন ভোর আসেনি-
ভোরের আলো ফোটেনি।
মেয়েটা কোনদিন আর ফিরে আসেনি-
কোনদিন আর কিছু বলেনি…
সোনালী – সোনালী আবির মাখা রোদ –
সন্ধ্যা আদর করে নিয়ে গেছে তারে –
রাত্রির পর্ণ কুটিরে।।
আমি আকাশ জুড়ে তারই শব্দ ছবি –
কুড়ায়ে পেয়েছি –
মেহগনি পাতার ভিতর -।
এত কথা –
এত ঘর – এত নিবিড় আবেশ
অনেক – অনেক – বর্ণমালা – আর –
শব্দ জুড়ে – জুড়ে ।
সেদিনও কি সেই অবোধ বালক
দুধ ভাত মাখা হাতে –
দুধ ভাত মাখা ঠোঁটে –
মিশে যাবে তিমিরে – আঁধারে – ।।
সোনালী – সোনালী আবির মাখা রোদ –
সন্ধ্যা আদর করে নিয়ে গেছে তারে ?
রাত্রির পর্ণ কুটিরে।।
তবু কেন আকাশে বাতাসে –
এত সুর এত মেঘ –
এত বৃষ্টি বুকে –
নীল্ – ভাঙ্গা ভাঙ্গা – কবিতার মত – ।
মেঘ যদি মিশে যায় – শিশিরে শিশির ঝরে
আরবার –
মেঘ পোয়াতি রোদ্দুর সব –
সোনালী – সোনালী আবির মাখা রোদ ?
সন্ধ্যা আদর করে নিয়ে গেছে তারে –
রাত্রির পর্ণ কুটিরে।।
এসো তবে – অতিবৃধ্ধ – বটবৃক্ষখানি –
দৃষ্টি তোমার মেঘ হোক – রোদ হোক –
পৃথিবীর আড়াআড়ি সময়ের রেখা ধরে –
হামাগুড়ি দেওয়া – অলস সকাল।।
হাত ধরে তার – অবোধ বালক –
দুধ ভাত মাখা হাতে –
দুধ ভাত মাখা ঠোঁটে –
ফিরে যাক – ফিরে যাক – নিবিড় হৃদয় ।
Recent Comments