অণু গল্প ৬ - (সুদীপ্ত মাইতি)

সুদীপ্ত মাইতি

November 24, 2021
Comments: 0
প্রতি বছর যেমন হয় – শেষ  পর্বে গিয়ে তাড়াহুড়ো করা, দোকানে যেটুকু জামা কাপড় পড়ে আছে বাজার ঢুঁড়ে তার মধ্যেই পছন্দ করা। এবার পুজোর আগেও তাই, কয়েকটা দিন মাত্র বরাদ্দ বাড়ির সকলের জন্য কেনাকাটা করতে। কাঁধে একটা, আর দুহাতে দুটো ব্যাগ নিয়ে নিউমার্কেটের সামনে অপরাহ্নের বারট্রাম স্ট্রীটের ভীড় ঠেলে এগোচ্ছি। এক দাদার সঙ্গে দেখা হবার কথা নির্দিষ্ট জায়গায়।  হঠাৎ আবিষ্কার করি হৃৎপিন্ডের কাছে  বাঁদিকের বুকপকেটে  যে স্টীল ব্লু কালারের কলমটি ছিল সেটি উধাও।
মুহূর্তে আশ্বিন শেষের আকশের  অকাল মেঘ আমার মনের আকাশ ছেয়ে ফেলল। হাতে দুব্যাগ ভর্তি শারদীয়ার আনন্দ, তবু মনটা মেঘলা। হতাশার মাঝে নিজেকেই দোষ দিতে থাকি সাধের জিনিসটা পকেটে রাখার জন্য। রাস্তার ভীড় ঘন মেঘের মতো। হাওয়া অফিস বলেছে, সন্ধ্যা থেকেই নামবে শরতের  অকাল বোধনের বৃষ্টি। নিশ্চিত ভাবেই ভীড়ে হারিয়েছে বস্তুটি। মানুষের পায়ের ধূলিতে মলিন হচ্ছে, ঠিকানা হারিয়ে ফেলছে সে।
যাইহোক,  একটু চিনচিনে মন খারাপ নিয়েই দাদার সাথে একটি দোকানে ঢুকি আমার সদ্যোজাত শিশু কন্যার জন্য জামা কিনতে। কন্যার নতুন জামা কিনতে কিনতে ভাবছি, কেমন মানাবে আমার মিঠাইকে। আর বুঝছি, মন ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছে। সহসা দাদার উচ্ছ্বসিত কন্ঠে চমকে উঠি।
” পেন পাওয়া গেছে!  “
কোথায় সে? তাকে তো আমি নিজের ভুলে পথের ধুলায় ফেলে এসেছি। তবে কি অন্য কেউ?
প্রবল বিষ্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করি, ” কোথায়? “
দাদা আঙুল তুলে দেখান। পরীক্ষার রেজাল্ট দেখার ধুকপুক নিয়ে তাকিয়ে দেখি, দুহাত ভর্তি আনন্দের ব্যাগের এক কোন থেকে কোমল দুটি ঠোঁটের মাঝখানে ঝকঝকে দাঁতের ঝিলিক!
একি অবিশ্বাস্য ভালোবাসা!  যাকে ফেলে এলাম অযত্নের ধূলিতে, সে কিনা আমারই দরজায় লাজুক বসে রয়েছে প্রেমকে ফিরিয়ে দেবার জন্য !
সযত্নে তুলে নিই তাকে, এনে বসাই নিরাপদ স্থানে।
আমার এ ভালোবাসা অহংকারী ছিল নিজের রূপে। আমার মনের কথা ছুঁয়ে যেত না তাকে।  আজ পথের ধুলায় সকল সাজ ফেলে নিরাভরণা প্রেম আমায় ধরা দিল পরম নিবেদনে।
বাইরে বেরিয়ে দেখি আকাশে মেঘ আরও জমেছে, তবে কোথাও যেন দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ছে  আনন্দাশ্রু হয়ে –
” হারিয়ে যেতে হবে আমায়, ফিরিয়ে পাব তবে। “

Subscribe to our Newsletter