মাঝে মাঝে এমন হয়,
সময় গড়িয়ে যায় –
উত্তর দেবার।
মনের ভেতর গুনগুনিয়ে ওঠা
সুর গুলো খুঁজতে থাকে
কথার দেশের ঠিকানা।
মেঘেরা ভাসতে ভাসতে একদিন
ফুরায় অশ্রুকণায়।
গোধূলির লাজুক রঙ লাগে
অভিমানী তারাদের চোখে।
রাত পাখিদের ডানায়
ছড়িয়ে পড়ে –
গভীর রাতের নিয়ন আলো।
তখনও জেগে থাকে একটি হৃদয়
শিশির ঝরার প্রহর গুনে,
কখন লিখবে তার কবি –
নিভৃত মনের শব্দ দুটি
চাঁদের গায়ে গায়ে।
ভবঘুরে মনকেমনের মেঘগুলো,
আজ বিকেলে কখন যেন
বহুদূর অতীতে ফেলে আসা
খোয়াব গাঁ- এ-র আকাশ ছুঁয়ে,
অন্তহীন ঝরে পড়ল –
স্মৃতির পাহাড় জুড়ে।
বারিধারাপাতে আবছা হয়ে এল
উদাসী মাঠের বিধূর দিগঞ্চল।
তার মানসপটে ফুটে উঠল
এক ঊজ্জ্বল সাদা – কালো ছবি।
সেদিনও এমনই বর্ষাঘন বিকেল,
মনের খেয়ালে পথ হারিয়ে
মেঘের হাত ধরা।
পাখিরা কবেই ফিরেছে কুলায়
বাতাসের পথ চিনে চিনে।
মুখর বর্ষন মাঝে গাছের দল
মৌনী – শান্ত, সুনিবিড়।
মেদুর বনপথে বৃষ্টি পায়ে পায়ে
হেঁটেছিলাম – তোর পাশে পাশে।
মেঘ ভেজা মালহারে
বিভোর হয়েছিল
আমার একুশ বছরের আকাশ।
তারপর…
কত শ্রাবণ কেঁদে ফিরেছে
রিক্তদিনের প্রান্তে।
আকুল ঝরনার ডাক
শূন্য হয়েছে নির্জন বালুপথে।
তবুও আসেনি বুঝি — উত্তর মেঘ।
বহু বৃষ্টি হীন শুষ্ক দিনের
পথ পার হয়ে,
আজ সহসা বিদায় বেলায় শুনি –
ফিরে এসেছে বুঝি,
আমার সাধের মেঘমালা।
টুপ্ টুপ্ টুপ্
ডানা হতে তার ঝরে,
মা মা পা ধা নি, ধা নি…
ভিজে ওঠে সেদিনের গানখানি।
বেলা-অবেলার কিছু পরিচয় –
আজও ক্ষনিকের সরণি ছাড়িয়ে,
মেদুর পাকদণ্ডী পথ বেয়ে
ছুঁয়ে ফেলে নিবিড় শিখরদেশ।
গল্পবলা এক বিকেলের হাত ধরে –
মাখে অস্তরাগের আলো,
মূলতানী রঙ নিয়ে খেলা করে
অনন্ত ইছামতীর জল।
একলা মানুষের আকাশে সেদিন –
নামে জ্যোৎস্না রাতের বাদল,
শত ঝিল্লি মুখরিত প্রান্তর
উদার হাত বাড়িয়ে, বলে –
“একা নও বন্ধু, তুমি স্বজন,
পথের পরিচয়ে আমার প্রাণের আপন।”
দিন বুঝি শেষ হলো তবে!
পাকাধান-গন্ধ টেনে নেবো বুকে
নবান্নের আগে………
ভেবেছিলাম এ অভ্যাস আবহমান
কাস্তে…… লাঙল……জল আর
ফসলের গান ……
এক ফসল উঠে গেলে,
জমির লাগে নতুন রূপটান…
গর্ভে আবার পরের সন্তান…
নিকোনো উঠোনে আল্পনা
পৌষ লক্ষ্মীর পা আঁকা আঙিনা …
এখন ধান কাটা শেষে
বাতাসে পোড়া গন্ধ ভাসে!!
মাঠে মাঠে জ্বলে মৃত ধানগাছের শব !
হা ঈশ্বর!!! এও সম্ভব!!
সব ঋণ শোধ হয় না।
সচেতন গণিতের নির্ভূল পথনির্দেশ
পৌঁছে দেয় না দিগন্ত প্রসারী
সবুজ সে সম্পর্কের অসীমতায়।
মাটির স্তন্যে আজন্ম লালিত
গাছ, চিরঋণী থেকে মৃত্যুতে
মাটিতেই আশ্রয় ভিক্ষা করে।
মাটিও রাখে না ঋণের হিসাব,
অবিরাম, অনন্ত সুধা ক্ষরণেই
তার যে অপার আনন্দ !
যার ভালোবাসায় স্নিগ্ধ হয়ে
ঋণী ভাবছো নিজেরে,
সেও বুঝি ঋণী হয়েছে
অন্তরে, তোমায় সিক্ত করে।
তবু নিশিভোর সাধনা অন্তে
থাকে, উত্তরাধিকারের ঋণ –
শতাব্দী পেরিয়ে ভাষার কাছে;
আমৃত্যু শোধের পর,
প্রারব্ধের ভার তখন দিয়ে যেতে হয়
আগামী কবির হাতে।
কবির কলমে :-
(প্রারব্ধের ভার বাবা দিয়ে গিয়েছেন হঠাৎই। বাবা হয়তো জানতেন না, আমার কবিতা চর্চার গোপন কাহিনী। উৎসাহও কখনো দেননি। হয়তো পচ্ছন্দ করতেন না, বা আমার সীমিত ক্ষমতার কথা জানতেন। বাবা আজ সশরীরে থাকলেও হয়তো সংকোচে দেখাতে পারতাম না। এখন আর দ্বিধাটুকু নেই। মৃত্যু তার সীমানা মুছে দিয়েছে। " প্রারব্ধ" তাই তাঁর কাছেই ঋণী থাক। )
Recent Comments