Category: Others

জলতরঙ্গ (শুভেন্দু ধাড়া)

আমাকে প্রেমিক নাও ভাবতে পারো।

হিমাঙ্ক তাপ জড়তা ছড়িয়ে দিলে
দ্বিধা বিভক্ত হাত গোলাপ অঞ্জলির স্পর্ধায়
নির্লজ্জ হতে পারেনি ।
অথচ কলেজ ফেরা পথ চুপিসারে রেখেছিল অপেক্ষায়
আমার চৈত্রমাস ।

আর ফাগুনের আগুন রেখে তোমার উচ্ছল ঢেউ
বাঁধ ভেঙ্গে দৈবাৎ দাবানল হয়ে গেলে
অজস্র কিট-পতঙ্গ ছুঁতে চায় জৈবিক সার্থকতা,
তখন নিতান্তই কাব্যিক বেদনায় মুখ ঢেকে
সমস্ত ইচ্ছে-ডানা আমার চিলেকোঠায় নির্বাসিত ।

অতঃপর রাত ঘুম জমে নির্দ্বিধায় দেওয়ালে দেওয়ালে
কোনারকীয় ভাস্কর্য হয়ে ওঠে ।

এই সব পাতা যা একটু গোচর পেলে
মুহূর্তকালে ফুল হয়ে যেত ,
তুমি পড়েও দেখনি ।

যেমন দেখনি একবারও বেবাক জলতরঙ্গে অদ্ভুত
আজ কেমন করে দিঘী নাস্তানাবুদ
চাঁদের ছায়াটুকুতেই !!

 

 


 

তারপর… (শুভেন্দু ধাড়া)

তারপর ?

তারপর…

লাল নীল আলোয় কেমন হাসতে হাসতেই
রেণু মিশে গেল অন্য পরাগে ।

আমি আমাকে খুঁজে পেলাম হিরোশিমা’র ধ্বংস স্তূপে ।
এখনও তার আরোপিত প্রভাব
মুছা গেল না !

 


 

 

 

 

যদি একটু দাঁড়াও (শুভেন্দু ধাড়া)

এক  মুহুর্ত যদি থামো ,বলতাম ভালোবাসো
এক মুহুর্ত  যদি  দাঁড়াও ,হাত দুটি বাড়িয়ে দিতাম

যে পুড়ছে অবিরত যতুগৃহে,
কাঙ্গাল  সে  কাঙ্গাল  ইন্দ্রধেণু’র ।

“ফুল সে তো গন্ধ ছড়িয়েই খালাস !
পাগল  ভ্রমর আজ মাতাল,  দেবদাস ।”

মধু আলিঙ্গনে দুই বাহু যদি বন্দি বানাতে চায়
অনন্ত জলরাশি ভাসিয়ে নিয়ে যায় !
       এও কি অপরাধ  তার ?

পালকের পরশ লাগে, কাশ ফুলে শিহরন । বসন্ত !
তুমি কবে আসবে ? না  কি এসেই পড়েছ !
বুছতে পারছিনা, দেখতে পাচ্ছি  না ,
চোখ হতে নীল তারা দুটি তুলে নিয়েছো  সেই কবেই,
সেথা এখনো রক্ত ঝরে ।

দেবী , যদি একটু দাঁড়াও ,
না হয় পুজার ছলেই কলিজাটুকুও অরপন করি তোমায়,
        তুমি সন্তুষ্ট হবে তো ?

নদী (শুভেন্দু ধাড়া)

নদীর সাথে আমার অনেক দিনের ভাব ছিল,
সে খুব কবিতা ভালবাসত ।
আমি তার মন রাখতে চরে বসে বসে এক এক পাতা
লিখতাম আর ভাসিয়ে দিতাম তার বুকে ।

কবিতারা ভেসে যেত
সারি সারি নৌকা দুলতে দুলতে  মিশে যেত তার অন্তরে ।

বেশ চলছিল, এভাবেই ।
কিন্তু এক্দিন রাতে কিছুতেই ঘুম আসছিল না চোখে
কেবলই মনে হচ্ছিল কে যেন আমায় ডাকছে
নিশির ডাক, পারলাম না এড়াতে,
মহাশ্মসানের অন্ধকার প্লাবিত পথে পা রাখলাম

পায়ে পায়ে অবশেষে পৌছে গেলাম সেই চরে,
            নদীর পাড়ে ।

নদী সেই রাতে ঝরনার সুরে বেজেছিল অচিন ছন্দে ।
            জোনাকির আলোকমালায়
আমি পৌছতেই সে অপেক্ষার অস্থিরতায় আছড়ে পড়ল বুকে ।
ভাসিয়ে নিয়ে গেল মাঝদরিয়ায়, সাঁতার জানতাম না,
আমি ডুবে গেলাম, আবার ভেসে উঠলাম, এইভাবেই
হাবুডুবু খাছ্ছি আর কানে কানে শুনছি, “আজ থেকে
তুমি শুধু কবি রইলে না আর,
আজ থেকে তুমি সাগর, সাগর আমার “।

সেই রাতের পর ছয় ছটা দিন
কেটেছে নিদ্রাহীন,
বেসামাল আমার খাতার পাতা , শব্দরা ভবঘুরে দিশাহারা
কিছু হাতে আসে  কিছু অধরা
তবুও নদীর জন্য অনেক কাটাকুটি শেষে
একটি মাত্র পাতা সেজেছিল কবিতার বেশে ।

কিন্তু একি !
সাত দিনের বেলায় গিয়ে দেখি

কোথায় নদী ! কোথায় ঢেঊ !কিছুই যে নেই আর
জল স্থির সবুজ, যেন সে নদী নয়, সে নিয়েছে দিঘীর আকার
আমি চিৎকার করলাম ‘ ও নদী , তুমি কোথায় গেলে ? আমি যে কবিতা ভাসাতে এলাম ! তুমি কি নেবে না?
কোনো সাড়া পেলাম না, ” নদী , আমি সাগর বলছি তোমার সাগর, তুমি কি শুনতে পাচ্ছো না ?

এবারও কোনও উত্তর আসে না, নদীর মুখে কুলুপ
আমি দাড়িয়ে চরে, পায়ের নিচের মাটি খসে পড়ে জলে ঝুপ ঝুপ ।
জল স্থির, আমি সামনে তাকাই, সামনের ঔ বাঁকে
বাঁধ পড়েছে মস্ত এই চঞ্চলা নদীর বুকে
চোখ জল এলো আমার , ” বাঁধনেই শেষে ধরা দেবে যদি
মিছেই আমি সাগর হলাম, মিছেই ভালোবাসলাম নদী ” !

হঠাৎ আমার ইচ্ছে হল সামলের ওই বাঁধটাকে
কেটেই দিই, ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে নিঃশ্চিহ্ন করি চিহ্নকে
কিন্তু পারি না, ফিরতে থাকি আপনায়, মন নদীতে ছুটে যায়
নদী বন্দী, প্রান হারা, নদী অসহায়
নদীর বুকে অসংখ্য কবিতা, প্রেম, বিপুল শক্তি ধরে,
এতগুলো সৃষ্টিরা যা পারলো না আমি নগন্য স্রষ্টা তা পারব কি করে !

সমন (শুভেন্দু ধাড়া)

(১)

না, এর আগে কখনই সরাসরি দেখিনি,
ভয়, যদি ডুবে যাই তলিয়ে যাই, কেবল আড়চোখে
ঢেউ গুনেছি দূরের তটে বসে ।

এখন আর ভয় নেই, নাই থল !
কি যায় আসে, শিখেছি ভেসে থাকবার কলাকৌশল

কিন্তু আজ ও চোখে চোখ রাখা মাত্রই
আমার হাড়, পাঁজরা মাংসে
        আগুন জ্বলে উঠ্ল দপ করে ।

(২)
না ! ওই সব লিপি সরাও, সরিয়ে নাও,
ওরা দস্যুর মতো আমায় টেনে হিঁচড়ে নিয়ে চলছে
বই পেরিয়ে মাটি পেরিয়ে ঐ গাছ পেরিয়ে
সে এক অদ্ভুত দেশে, যেখানে তোমাকে ছাড়া
আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না ।

(৩)
তারপর থেকে পা টলোমলো,
তারপর থেকে রাস্তা এলোমেলো
অগোছালো বিছানাপত্তর পড়ার টেবিল ।
তারপর থেকেই কোনো কথা নেই, নিরবাক।
তারপর থেকেই তিনশ ষাঠ ডিগ্রি তে ঘুরপাক।

এতো নেশা কি করে সাজাও ঐ এতটুকু পাত্রে!

(৪)
আত্মরক্ষার কলাকৌশল
নিঃস্ফল ।

যদিও বিসর্যন ।
এর পর, জলেও আগুন, আগুনে জল ।
আমার হাতে কিছুই নেই
তোমার সমনটুকু সম্বল ।

Announcements

  • আপনাদের আশীর্বাদে আমাদের এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ অষ্টম বর্ষ অতিক্রম করলো। আমরা আমাদের এই site টি নতুন ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করলাম। আপনাদের মতামত জানান আমাদের email এ (info@amarbanglakobita.com)। বিশদ জানতে contact us menu দেখুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
  • আনন্দ সংবাদ! আমাদের এই site এ এবার থেকে গল্প, অনু গল্প, প্রবন্ধ ও উপন্যাস প্রকাশিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।

Recent Comments

Editorial Choice