Tag: Sahittya

পোড়ামাটি (সাগ্নিক দাম)

সময়ে কেমন পুরোনো হয়েছে কথা —
ধুলো জমা পরে , ক্রমে ক্ষয়ে গেছে মুখ !
তবু পেরিয়ে এসেও শত-শত সভ্যতা ..
শিকড়ের কাছে হেরে যেতে কত সুখ !
সেখানে স্রোতেরা থমকে গিয়েছে কবে..!
নতুন আবির মেখে উড়ে গেছে হাওয়া ..
তবু আলগোছে জমা.. বাতিলের উৎসবে ;
একা মন , তার নিয়মিত আসা যাওয়া !
কী আছে সেখানে ..মোহর না পোড়ামাটি ?
শেষ রোদ্দূরে জ্বলা বিকেলের ছাই —
পথের গভীরে দেখো বেশ পরিপাটি
তুমি , আমি , আজও হাতে হাত…হেঁটে যাই !!

ফুলকুমারী (2)

ফুলকুমারী ফুলকুমারী
তোর সাথে আর নয়কো আড়ি।
জানিস না তুই –
রাগটি আমার শরীর জুড়ে
মান অভিমান আকাশ ফুঁড়ে।
খেলনাগুলো নিজের মনে
হারায় কেন অন্ধ কোনে ?।
স্নানের সময় জল নিয়ে তাই
ঘণ্টা খানেক খেলতে যে চাই
বারণ করলে যুদ্ধ বাধে –
গুণ্ডা কি আর এমনি সাজে ?

গোপাল বলিস, সোনা বলিস, লক্ষ্মী বলিস রাই –
মন যে আমার ভিজবে না রে – যখন যেটা চাই –
তখন যদি বারণ করিস, কাট্টি তবে –
ভাবছিস কি ? ভাবটি আবার এমনি হবে ?
গাড়ি চাই – বেলুন চাই – চাই যে কত কিছু
ঘুড়িও চাই । অনেক লিস্টি আছে পিছু পিছু।।
তবেই বলি দুষ্ট আমি – মিষ্টি নই যে –
ভুলবো আমি অল্পে-তে ?!
যতই ভোলাস্ – আকাশ কুসুম গল্পে-তে।।

ভয় (অমিত তালুকদার)

সেদিন ভয় কে দেখলাম খুব কাছ থেকে!
এতটাই কাছে চলে গেছিলাম যে,
হাত দিয়া ধরে ফেললাম, আর সেই
যে মুঠোয় ধরেছি, যেতে দিই নি আর।
ঘরে এসে সেলোটেপ দিয়ে দেওয়ালে
আটকাবার চেষ্টা করলাম, কিন্তু লাগলো না!
ছিটকে বেরিয়ে আসলো, বহু কষ্টে
শেষমেশ একটা কাঁচের গ্লাসে ঢুকিয়ে,
বাটি চাপা দিলাম। অবাক হয়ে দেখছিলাম,

ছোট্ট একটা বস্তু, চটচটে লাল রঙের।
অনেকটা হৃৎপিণ্ডের এর মতন, কেমন যেন
হাত পা ছুঁড়ে ছটফট করছে, আর্তনাদ করছে!
আমার খারাপ লাগলো, তাই ঢাকনা খুলে দিলাম।

চোখের সামনে, ভয় একনিমেষে আকাশে মিলিয়ে গেলো!
ভয় ও বোধহয় বদ্ধ জায়গায় ভীষণ ভয় পায়!

চামেলী মাসি (অর্পণ বসু)

ওপার বাংলায় দ্যাশ আমার;
ফরিদপুরে ভিটে।
বাবা সকালে উঠে গামছা গলায়,
লাঙলে হাত দিত,
আর মা, আমার আর ভাইয়ের জন্য রান্না চাপাত।

পান্তা ভাত খেয়ে আমি আর ভাই পেয়ারা গাছে উঠতাম চড়ে,

“ও বালি! বাবু আয়, একবারটি এদিকে, বাবুর খাবারটা দিয়ে আয়।”
“আসছি মা! এই দিদি আরেকটু পরে।”

পাশের গাঁয়ের দুলাল চাচা নাম রেখেছিল বালি। ওর মেয়েটা কালাজ্বরে মরেছে,
ছেলেটা বোধহয় বর্ডারে আর বৌটা! আস্ত পাগলি!

পুকুরের ধার ঘেষে যাচ্ছিলাম,
দেখছিলাম শিবু আর পিসি কে,
দেখছিলাম লম্বা চুল কতটা,
যাচ্ছিলাম বাবুর পাঠশালার ওপাশ দিয়ে।

বাবু যখন ছোট ছিল,
আমার কোলে ঘুমোতোইনা,
আমি মারলে খিল-খিল করে উঠত হেসে।
‘খোকা ঘুমাল, পাড়া জুরাল, বর্গি এল দেশে..’

এক রাত্রে কি যে হল, কে জানে,
সেরম কিছু মনে নাই,
কেরম পোড়া পোড়া গন্ধ, কালো কালো ধোয়া,
লোকের হাহাকার, চিরবির আওয়াজ,
হঠাৎ মা বাবুকে আর আমাকে টেনে তুলে,
ছুড়ে ফেলল বাইরে, পিছনের বাঁশ বাগানে।
“পালা বালি পালা! বালি পালা!”
আমি ছুটলাম, খুব ছুটলাম।
দুটো লোক মশাল নিয়ে ধেয়ে আসছে,
আর বাবু?
নেই আমার পাশে।

চোখ খুলল কাঁটাতারের পাশে,
বর্ডারের কাঁটাতার।
কাপড়টা পাশ দিয়ে এক হাত ছেঁড়া।
পেরোলাম কাঁটাতার,
পেরোলাম ধান খেত,
পেরোলাম অজস্র কাদা,
পেরোলাম আগের রাতের ধোঁয়া,
পেরোলাম মুক্ত বাতাস,
পেরোলাম দুলাল চাচার ছাই হয়ে যাওয়া ঘর,
পেরোলাম রক্ত,
পেরোলাম পোড়া হাট,
পেরোলাম দানগুলির গুটি,
পেরোলাম বুবুর টুকরো কাপড়,
পেরোলাম ছেঁড়া রুটি।
পেরোলাম পুলিশ,
পেরোলাম সূর্যের আলো,
আর পেরোলাম বালি…
বালি…
বালি… বালি…

সাড়ে সাত যুগ

তার চেয়ে তো সন্ধে আসে তাড়াতাড়ি,
তবু – প্রতি সন্ধ্যায় তার আসা হয় না –
অকারণ ভিড়ে – ভাসতে ভাসতে –
নতুন কিছু মানুষ দেখা।
নতুন কিছু মুখ – নতুন কিছু –
তবু তার আসা হয় না।

আসবে বলে এসেছিলো কখনো ?
অথবা আসবো বলেছিলো ?
মনেও কি আছে সেসব ?
সেই সাড়ে সাত যুগ আগে -।

নদী বক্ষে এতো চর ছিল না –
বাঁধটাই হয়তো ছিল না।
মনেও কি পড়ে না ?
মাত্র সাড়ে সাত যুগ আগে -!
মুহূর্তরা সব মমির মতো –
জাল বুনতে সময় লাগে –

…সাড়ে সাত যুগ লাগে।

Announcements

  • আপনাদের আশীর্বাদে আমাদের এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ অষ্টম বর্ষ অতিক্রম করলো। আমরা আমাদের এই site টি নতুন ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করলাম। আপনাদের মতামত জানান আমাদের email এ (info@amarbanglakobita.com)। বিশদ জানতে contact us menu দেখুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
  • আনন্দ সংবাদ! আমাদের এই site এ এবার থেকে গল্প, অনু গল্প, প্রবন্ধ ও উপন্যাস প্রকাশিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।

Recent Comments

Editorial Choice