Tag: Kolkata

কাল দেখো তবে

“থেকে যেতে পারতে! আরও একটা মাস – আরও একটা বছর –
যেমন ভাবে – পাখিদের গান শুনে শুনে – তিস্তার কোলে মাথা রেখে-
এই পাথরের স্তূপ গুলো রয়ে গেছে – কতকাল।
সবুজের ডানা মেলে – সন্ধ্যা নামার আগেই না হয় –
আমাদের – হয়ে যেতে। ”

“তোমাদের হতে গেলে – বুকে লাগে দম –
প্রাণে চাই স্ফূর্তি – রক্ত আরো লাল হওয়া চাই। ”

“বেশ – তবে তোমায় আরও রাঙিয়ে দেব –
কাল ঠিক সূর্য ওঠার আগে;
স্বপ্নের কড়িকাঠ গুলো পেরিয়ে –
ঘুম ভেঙে – এসে দাড়িও – এইখানে – এইভাবে। ”

“জানি না – সেই অন্ধকার ঠেলে আসা হবে কিনা।
ঘুম ভাঙার ঠিক আগে – যখন যন্ত্রনা গুলো খুব জাগ্রত হয়ে ওঠে –
মনে হয় মুহূর্তে মুহূর্তে স্খলন – আর কদাকার তছরুপ,
সর্পিল আগ্রাসন – আমাকে গ্রাস করে।
আমি তখনি ঠিক – আবার ঘুমিয়ে পড়ি।
মনে হয় এই প্রভাত – এই সূর্য – এই আলো – কিছুই চাই না –
অন্ধকার ঢের ভালো। আমি ঘুমিয়ে পড়ি। ”

“বেশ – তবে তোমার সেই যন্ত্রণার ঠিক আগে –
তুমি দেখো – আমি এসে যাবো।
তোমার বাড়ীর উঠানে – যেখানে একরাশ শিশির এসে –
বরফ হয়ে গেছে –
আমি ঠিক এসে যাব।
কাল দেখো – তোমার ভোর গুলো সব তারা হয়ে যাবে –
পাহাড়ের গায়ে গায়ে; আর কান্না গুলো বরফ।
হেমন্তের মিষ্টি গন্ধ গুলো সাজিয়ে দেব তোমার বাগানে –
তোমাকে রাঙিয়ে দেব – অনেক – আমার নরম ভোরে। ”

থাক! এখন ওসব কথা থাক।
স্বপ্ন দেখতে বড় ভয় হয় – তাই কত দিন আমি স্বপ্ন দেখি না।
আচ্ছা বলতো – এখনো কি শিশিরের দানা খুঁটে খুঁটে সেই ভাবে ভোর নামে –
আর সেই স্তর স্তর জমে থাকা অভিমান গুলো –
এখনো কি লজ্জায় লাল হয়ে যায় ?
ভোর দেখতে বড়ো ভয় হয় – কতদিন আমি ভোর দেখি না।

ভোর!
আরও সুন্দর হয়েছে সে।
কাল দেখো তবে – রঙ্গীতের তীর ধরে –
আলতা ভেজা পায়ে দুরন্ত কিশোরীর মতো।
কাল দেখো তাকে।
আমি বলে দেব – মাথায় হলুদ রডোডেনড্রন –
আর – হাতে যেন থাকে মোহন বাঁশি।
তোমার স্তব্ধ চোখ দুটি – নীল – আরও গভীর নীল – ঘন করে –
রক্তিম আবদারে –
একসাথে যেন কবিতারা ঘর করে। আমি বলে দেব।
কাল দেখো তবে।

                  (অমিতাভ)

আজন্মের সুখ

এই নাও টুকরো টুকরো হৃদয় আমার,
আর আমায় দিয়ে যাও – তোমার স্তব্ধতা।
এই-সব তুমি পাখি করে দিও –
কান্নাগুলো ফুল।
নিয়ে নাও যত বন্ধন – যত নিয়ম – যত শৃঙ্খল,
বে-নিয়মে – আমাকে দাও তোমার মুগ্ধতা।
এক টুকরো কাঞ্চনজঙ্ঘা।
নিঃশ্বাসে তোমার বৃষ্টি নামে,
এক নীল, – রাঙিয়ে দেওয়া বৃষ্টি।
মনে হয় – মেঘে মেঘে ঝর্ণার রং –
ঘ্রান নেমে আসে – আজন্মের সুখ।
পিঠে – বুকে এলোমেলো শীতল হাওয়া,
ভেঙে পড়ে রোদ্দুর।
আমি মেঘলা হবো – তুমি আকাশ পারে কবি।

মেঘলার রূপকথা

ট্রেনটা কখন যেন শ্বাপদের মতো চুপিসাড়ে এসে দাঁড়িয়েছে।

সারা রাস্তা বয়ে আনা বোঝাটা পাশে সরিয়ে মন চায় –
আরও একটু স্পর্শ।
সেই আমি – আর – তুমি;
ঠিক হারিয়ে যাওয়ার আগে –
নতুন দিনের মতো।

তোলপাড় করে ওঠে আমার নিটোল বুনোট।
ফিস ফিস করে জানান দেয় – শ্বাপদটা –
সময় শেষ হওয়ার যন্ত্রনা।

ঠিক সেই সময় দেখি –
তুমি তখনও দরকষাকষিতে ব্যস্ত –
আরও দু চার পয়সার সস্তা সাশ্রয়।

এইভাবেই –
ধীরে ধীরে কুয়াশায় মধ্যবিত্ত প্রেম –
মধ্যবর্তী – হয়ে যায়।
শুধু ঝাপসা আলোয় হয়তোবা দু ফোঁটা জলের রেখা –
দু হাত শূন্যে তুলে গর্জে ওঠে –
অপূর্ণতা যদি কিছু থেকেও যায় –
তা কিছু বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো নয় -।

অন্তবান (বিকাশ দাস)

বাঁচবি জলে মরবি ধরে মাটি ।
মরবি জলে বাঁচবি ধরে মাটি ।
এই জলের ক্রমে এই ধরার ক্রমে ।
তাই বলে থাকবি জলে আসবি না স্থলে
     থাকবি স্থলে নামবি না জলে ।

ওরে পোড়ামুখো ! যাবি কোন মুখো !
একদিন না একদিন ভয় উতরে নামতে হবে জলে
কখন কে জানে কোন যে ঋতুর খুঁটির অবতলে
এক নিমেষে অন্ধ বধির নগ্নশরীর শুতে যায় বলে ।

  মাটির টুকরো নিয়ে আজ দলাদলি মারামারি ।
  জলের দাগ নিয়ে কাল ভাগাভাগি কাড়াকাড়ি ।
  অযথা দু প্রান্তের রক্ত মাংস মানুষধারী
  যদিও কাল জল মাটির জীবন হাজারদুয়ারি।

ওরে পোড়ামুখো ! যাবি কোন মুখো !
একদিন তো যেতে হবে এই মাটিতে এই জলে
সব জমা খরচ ফেলে শব শরীর মাটির ঢেলায় দলে
শেষ যাত্রা চিতায় জ্বলে অজর জলের স্রোতের কবলে ।

‘আসি রে’ – আমার বিকেল

বিকেল টা অনেক্ষন একলা বসেছিল ছাদের কিনারে।
তারপর রং চটা ম্যাড়ম্যাড়ে একটা হলুদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো –
আসি রে।
বললো কিন্তু ঠোঁট নড়লো না – একটুও।

তারে তারে – জট পড়ে যাওয়া একটুরো আকাশ –
আর সেই নিঃসঙ্গ বিকেল।
ঘাড় কাত করে ইতি উতি দেখলাম।
নাঃ, একটা পানসে লোনা হাওয়া ছাড়া –
আর তো কিছুই চোখে পড়ে না।
– তবে, বললো তো! কিন্তু কাকে বললো?

বিকেল কি কাউকে সারাদিনের বারোমাস্যা শোনাতে বসেছিল?
এ সব তো কখনো ইতিহাস হয় না ;
এ সব কি কখনো ফ্রেম বন্দি হয় ?
জানি না। হয়তো হয় -।

তবে এটুকু জানি –
এখান থেকে গড়াতে গড়াতে সান্তাক্রূজ হয়ে –
তারপর ছুটি।
আরো জানি – কতটা পথ তাকে যেতে হবে ।
আরো কত বার এই মন খারাপের বার্তা দিতে হবে তাকে –
‘আসি রে’।

একটা লোনা পানসে হাওয়ায় – হলুদ স্বপ্নের মতো মুছে নিতে নিতে
ফিরে যাবে – আমার সাধের বিকেল।
কখনো আমার হাতের চুম্বন মিশে যাবে আরবের জলে –
কখনো আফ্রিকার জঙ্গল ফেলে চলে যাবে সে।

তবে –
সেই অতৃপ্ত – ক্ষয়ে যাওয়া ঝাপসা আলোয়,
এই বার্তা, প্রেমিকের মতো –
চোখ ছুঁয়ে বলে যাক – শেষ বার –
‘আসি রে’, – আমার বিকেল।


                    (অমিতাভ বাগ)

Announcements

  • আপনাদের আশীর্বাদে আমাদের এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ অষ্টম বর্ষ অতিক্রম করলো। আমরা আমাদের এই site টি নতুন ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করলাম। আপনাদের মতামত জানান আমাদের email এ (info@amarbanglakobita.com)। বিশদ জানতে contact us menu দেখুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
  • আনন্দ সংবাদ! আমাদের এই site এ এবার থেকে গল্প, অনু গল্প, প্রবন্ধ ও উপন্যাস প্রকাশিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।

Recent Comments

Editorial Choice