Tag: Kobita

বারাঙ্গনা

এক পয়সা দাম – আমি কমিয়ে দিলাম
এখন আরও সস্তা দরে
বিকাই আমি – সবার তরে ।।

বিকাই আমি শ্রমের প্রহর
বিকাই আমার গুনের মোহর
বিকাই আমার মান
              বিকাই আমি –
বিকাই আমার প্রাণ ।।
কিনতে যদি চাও গো তারে
“বক্সী গঞ্জে পদ্মা পারে
হাট বসেছে শুক্রবারে ।।”
              বিকাই আমি –
বিকাই আমি – সবার তরে ।।

বিকাই আমি – আমার তরে
বিকাই আমি – তোমার তরে
বিকাই মানিক – বিকাই সে ধন
বিকাই দেহ – বিকাই সে মন ।।
বিকাই আমার বুদ্ধি সকল
                জলের দরে
                ওজন করে
                বিকাই আমি –
বিকাই আমি – সবার তরে ।।

একফোঁটা মান – নিজের তরে
রাখব আমি – যতন করে
ভেবেছিলেম – আপন মনে
একটুকু আশ একটু ক্ষণে ।।

চুকিয়ে দেখি ঋণের বোঝা
একটুখানি রইলো ফাঁকা –
মানটুকু মোর – দিতে হলো 
              ফাঁকির ঘরে
              সুদের ভারে
শতেক আমার ঋণের দোরে ।।

বিকিকিনি হলও শেষে – দিন ফুরালো সন্ধ্যা এসে
হাট বাজার – আর – বন্ধ মহল –
কুড়িয়ে নিলেম – পসার সকল ।।

“গাড়ি চালায় বংশী বদন
সঙ্গে যে যায় ভাগ্নে মদন ।।”
পয়সা ঝুড়ি কাঁখে নিয়ে –
নিরুদ্দেশে যাই হারিয়ে –
মনখারাপি বিকেল সে জন
পথ হারায়ে ফুরায় সে ধন,
শূন্য আমি শূন্য সকল,
শূন্য দিয়ে ভরব আগল,
শূন্য তারে বোঝাই করে –
ফিরি আমি শূন্য ঘরে ।।

আমরাও সব

নি:সঙ্গ কিছু রূপকথা-

একা পথ একা মাঠ –

একা একা জোনাকির নাচানাচি –

নি:সঙ্গ কিছু উপকথা । ।

পরিশ্রান্ত দিনের শেষে

বিবর্ণ তোমার মুখের মতো।


হলুদ বিকেলগুলো সব – মাখামাখি জ্যোৎস্নার মতো

অন্ধকার আদর করে টেনে নেয়

রাঙা মেঘ – কেঁদে কেঁদে চলে যায় – ।।


একঘর বন্দী স্বপ্নগুলো

              জ্বলে ওঠে – নিষ্কাম প্রদীপ সব

হাওয়া ভরা বুকে – মুহুর্মুহু শঙ্খধ্বনি

              জ্বলে ওঠে

              বেজে ওঠে ।।


                 অতিদূর

ছায়াপথের মতো মনখারাপ –

                উড়ে যায় – উড়ে যায় –

যেখানে আমার তাতাই নদী –

                আঁকা বাঁকা পথ ঘুরে

                 সীমাহীন দূর সুদূরের নেশা –

ভেসে যায় – ভেসে যায় –

তেমনই অধরা ক্ষীণ – তুমি ।।


তবু তো কিছু মেঠো পথ – আজও পথ খুঁজে পায়

তবু তো কিছু বালুচর – তীর খুঁজে পায় –

তবু তো কিছু নেশা নেশা – আচ্ছন্ন মদিরা

ঠোঁট খুঁজে পায় – মন খুঁজে পায় – ।।


এভাবে চলে যাবে বলে নি তো কেউ –

এভাবে হেরে যাবে ভাবে নি তো কেউ –


কত রাত কেটে গেছে – আকাশের তারা গুনে গুনে –

কত দিন কেটে গেছে – বসন্ত গুনে গুনে

               মনে মনে

               কেটে গেছে ।।


অচেনা তারাদের ভিড়ে ভিড়ে

                খুঁজে ফিরি – তবু সেই –

চেনা-মুখ যদি পাই – সেই আগের মতো –

যদি আবার কথকতা ভরা দুটি চোখ –

                 বলে ওঠে – আরবার

পিউ তাতা ফিরে গেছে আদরে আদরে

                এসো তবে

                আঁধারে গভীরে ।

                চলে যাই আমরাও সব –

Listen this poetry


 

চল যমুনায়

যদি আজ আকাশ ঘিরে মেঘ জমে 
যদি আজ বাদল ভেঙ্গে মেঘ ঝরে 
যদি আজ শিউলি ফুলে রং জমে 
যদি আজ পলাশ বনে লাজ করে –

এবার আপন মনে খেলার সাথী 
চল যমুনায় প্রেম মাখি 
হাতের পরে হাত রাখি 
চোখের পরে চোখ রাখি। 

যদি আজ –
ঘুম ছিঁড়ে মোর রাত পোয়াতি
যদি আজ –
ঘুম জুড়ে মেঘ রাত নিশুতি –
যদি এই সৃষ্টি জুড়ে ভাঙ্গন মেলা 
তবু হায় হেলায় ফেলি ছেলেবেলা। 

যদি হায় আমার আমি যায় মুছি –
                       গো যায় মুছি –
যদি হায় মরণ দিয়ে যাই বাঁচি –
                       গো যাই বাঁচি –
তবু ওগো সৃষ্টি নিয়ে খুব ছুটি – 
                      গো খুব ছুটি –
যখন আমার – নিশীথ জুড়ে রাত পোয়াতি
                     রাত নিশুতি। 

সেদিন তুমি মিথ্যা কোনো আশ্বাস দিয়ে 
এমনি করে হঠাৎ করে দাও রাঙিয়ে।

তবু যখন দুচোখ ভাঙ্গা স্বপন জোড়া 
হার মানা এই আকাশ জুড়ে আবার হারা –
মিশে যাবে – বুড়ি তাতাই – আমার আমি –
                              নদীর তীরে – 
হার মানা এই আকাশ জুড়ে –  ।

এবার তবে খেলার সাথী –
চল যমুনায় প্রেম মাখি  –
হাতের পরে হাত রাখি – 
চোখের পরে চোখ রাখি। 

 

Listen this poetry


 

নগ্ন নিস্তব্ধতা (অমরনাথ বনিক)

কখনো কোনদিন একলা উদাস সকালে
তাকে যদি নিজের করে ডাকো
যে নেই সেও আসে
ক্ষমার ঔদার্যে
নিস্তব্ধ আকাশের আশ্বাসে তাকিয়ে— অঝোরে কাঁদলে যে এসেও ধরা দেয় না
তার উদাস স্পর্শতে
যদি না জানা গহনের উত্তর পেতে চাও
যদি কোনও মন-কেমনের উদাস বিকেলের চোখের জলের কারণ জানতে চাও
যদি চোখ ভেজা সন্ধের ক্যানভাসের
শেষ গন্তব্য কেন সে – জানতে চাও
তবে কখন  কোনদিন একলা উদাস সকালে
নিজের মনের নগ্ন নিস্তব্ধতাকে একটু কথা বলতে দাও।

 

 


 

স্মৃতি (হাসান ইমতি)

স্মৃতি, তোর চুল ময়ূরাক্ষীর কাক কালো জল,
আমার খেয়া শুধু বারবার ডুবে ডুবে যায়,
আমি বারবার হেরে যাই নিজের কাছে,
আমি বারবার হেরে যাই সময়ের কাছে,
আমি বারবার হেরে যাই নিয়তির কাছে,
তবুও তুই প্রবহমান, স্রোতস্বিনী, তেজস্বিনী ।

স্মৃতি, তোর দুচোখ নিঃসীম নির্নিমেষ নক্ষত্রবীথি
আমার কবিতার খাতা ছিঁড়ে তৈরি হয় কাগজের
খেলনা এরোপ্লেন, হাওয়ায় হাওয়ায় উদ্দাম উড়ে,
সে এরোপ্লেন কখনো পায়না তোর ছায়াপথের দেখা,
একসময় ক্লান্ত হয়ে সে ঝড়ে পরে ভূমি শয্যায়,
তবুও তুই থেকে যাস নিঃসীম নির্নিমেষ নক্ষত্রবীথি।

স্মৃতি, তোর হৃদয় অনতিক্রম্য অনন্ত মহাকাল,
আমার হাহাকার নিঃশেষে মিশে যায় স্তব্ধ
সাগরের বুকে ঝরা এক ফোঁটা বৃষ্টির মতো,
আমার বুক থেকে উঠে আসা দীর্ঘশ্বাসের পথ
বেয়ে ধরণীতে নেমে আসে বাঁধভাঙা অশ্রু প্লাবন,
তবুও তুই থেকে যাস অনতিক্রম্য অনন্ত মহাকাল ।


 

Announcements

  • আপনাদের আশীর্বাদে আমাদের এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ অষ্টম বর্ষ অতিক্রম করলো। আমরা আমাদের এই site টি নতুন ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করলাম। আপনাদের মতামত জানান আমাদের email এ (info@amarbanglakobita.com)। বিশদ জানতে contact us menu দেখুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
  • আনন্দ সংবাদ! আমাদের এই site এ এবার থেকে গল্প, অনু গল্প, প্রবন্ধ ও উপন্যাস প্রকাশিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।

Recent Comments

Editorial Choice