Tag: Kobita

ভয় (অমিত তালুকদার)

সেদিন ভয় কে দেখলাম খুব কাছ থেকে!
এতটাই কাছে চলে গেছিলাম যে,
হাত দিয়া ধরে ফেললাম, আর সেই
যে মুঠোয় ধরেছি, যেতে দিই নি আর।
ঘরে এসে সেলোটেপ দিয়ে দেওয়ালে
আটকাবার চেষ্টা করলাম, কিন্তু লাগলো না!
ছিটকে বেরিয়ে আসলো, বহু কষ্টে
শেষমেশ একটা কাঁচের গ্লাসে ঢুকিয়ে,
বাটি চাপা দিলাম। অবাক হয়ে দেখছিলাম,

ছোট্ট একটা বস্তু, চটচটে লাল রঙের।
অনেকটা হৃৎপিণ্ডের এর মতন, কেমন যেন
হাত পা ছুঁড়ে ছটফট করছে, আর্তনাদ করছে!
আমার খারাপ লাগলো, তাই ঢাকনা খুলে দিলাম।

চোখের সামনে, ভয় একনিমেষে আকাশে মিলিয়ে গেলো!
ভয় ও বোধহয় বদ্ধ জায়গায় ভীষণ ভয় পায়!

চামেলী মাসি (অর্পণ বসু)

ওপার বাংলায় দ্যাশ আমার;
ফরিদপুরে ভিটে।
বাবা সকালে উঠে গামছা গলায়,
লাঙলে হাত দিত,
আর মা, আমার আর ভাইয়ের জন্য রান্না চাপাত।

পান্তা ভাত খেয়ে আমি আর ভাই পেয়ারা গাছে উঠতাম চড়ে,

“ও বালি! বাবু আয়, একবারটি এদিকে, বাবুর খাবারটা দিয়ে আয়।”
“আসছি মা! এই দিদি আরেকটু পরে।”

পাশের গাঁয়ের দুলাল চাচা নাম রেখেছিল বালি। ওর মেয়েটা কালাজ্বরে মরেছে,
ছেলেটা বোধহয় বর্ডারে আর বৌটা! আস্ত পাগলি!

পুকুরের ধার ঘেষে যাচ্ছিলাম,
দেখছিলাম শিবু আর পিসি কে,
দেখছিলাম লম্বা চুল কতটা,
যাচ্ছিলাম বাবুর পাঠশালার ওপাশ দিয়ে।

বাবু যখন ছোট ছিল,
আমার কোলে ঘুমোতোইনা,
আমি মারলে খিল-খিল করে উঠত হেসে।
‘খোকা ঘুমাল, পাড়া জুরাল, বর্গি এল দেশে..’

এক রাত্রে কি যে হল, কে জানে,
সেরম কিছু মনে নাই,
কেরম পোড়া পোড়া গন্ধ, কালো কালো ধোয়া,
লোকের হাহাকার, চিরবির আওয়াজ,
হঠাৎ মা বাবুকে আর আমাকে টেনে তুলে,
ছুড়ে ফেলল বাইরে, পিছনের বাঁশ বাগানে।
“পালা বালি পালা! বালি পালা!”
আমি ছুটলাম, খুব ছুটলাম।
দুটো লোক মশাল নিয়ে ধেয়ে আসছে,
আর বাবু?
নেই আমার পাশে।

চোখ খুলল কাঁটাতারের পাশে,
বর্ডারের কাঁটাতার।
কাপড়টা পাশ দিয়ে এক হাত ছেঁড়া।
পেরোলাম কাঁটাতার,
পেরোলাম ধান খেত,
পেরোলাম অজস্র কাদা,
পেরোলাম আগের রাতের ধোঁয়া,
পেরোলাম মুক্ত বাতাস,
পেরোলাম দুলাল চাচার ছাই হয়ে যাওয়া ঘর,
পেরোলাম রক্ত,
পেরোলাম পোড়া হাট,
পেরোলাম দানগুলির গুটি,
পেরোলাম বুবুর টুকরো কাপড়,
পেরোলাম ছেঁড়া রুটি।
পেরোলাম পুলিশ,
পেরোলাম সূর্যের আলো,
আর পেরোলাম বালি…
বালি…
বালি… বালি…

সাড়ে সাত যুগ

তার চেয়ে তো সন্ধে আসে তাড়াতাড়ি,
তবু – প্রতি সন্ধ্যায় তার আসা হয় না –
অকারণ ভিড়ে – ভাসতে ভাসতে –
নতুন কিছু মানুষ দেখা।
নতুন কিছু মুখ – নতুন কিছু –
তবু তার আসা হয় না।

আসবে বলে এসেছিলো কখনো ?
অথবা আসবো বলেছিলো ?
মনেও কি আছে সেসব ?
সেই সাড়ে সাত যুগ আগে -।

নদী বক্ষে এতো চর ছিল না –
বাঁধটাই হয়তো ছিল না।
মনেও কি পড়ে না ?
মাত্র সাড়ে সাত যুগ আগে -!
মুহূর্তরা সব মমির মতো –
জাল বুনতে সময় লাগে –

…সাড়ে সাত যুগ লাগে।

অভিসারিকা (মৌসুমী রায় ঘোষ)

ক্লান্ত কারা যেন বলে গেলো
দেখা হবে আজ|
সকাল থেকে তৈরি হয়েছি|
স্মৃতি থেকে তুলি করে তুলে
এনেছি তোমার সাথে কাটানো
মন কেমন করা বিকেলের রঙ|
যত্নে লাগিয়েছি গালে|
কথা ছিলও দেখা হলে
ধরা দিতে হবে|
এখন শুধু তারই অপেক্ষা|
মেঘ রঙা কাজল চোখে দেওয়ার
বড়ো সাধ| তবু মনে ভয়|
মেঘেই তো লুকিয়ে বৃষ্টি|
রক্তাক্ত ঠোঁটে অভিসারে যাই|

 


 

ফুলকুমারী ফুলকুমারী

ফুলকুমারী ফুলকুমারী তোর সাথে আজ আমার আড়ি।
পলাশ ছাপা বনের মাঝে একলা একলা ঘুরিস ভারী ?
ফুলকুমারী ফুলকুমারী তোর সাথে আজ আমার আড়ি।

ফুলকুমারী ফুলকুমারী –
রাগ হয় না ভারী?
শিউলি রাঙ্গা পথের ‘পরে –
দেখিস সকাল কেমন ঝরে ?
দেখিস কেমন চাঁদের আলো-
জোছন গুলো মিশিয়ে দিল –

ফুলকুমারী ফুলকুমারী তোর সাথে আজ আমার আড়ি।

ফুলকুমারী ফুলকুমারী –
দেখিস কেমন খোঁপার সাজে –
আমায় বুঝি মানায় না যে।
দেখিস আবার মুকুট পরে
সই কি তোর মনে ধরে?
যাহ –
তোর সাথে আজ আমার আড়ি-
একা একা ঘুরিস ভারী –
ফুলকুমারী ফুলকুমারী।

বৃষ্টি ভেজা এলো চুলে
মিষ্টি হাওয়ায় আঁচল তুলে
মেঘের দেশে ডানা মেলে
হারিয়ে যাস তুই আমায় ফেলে।

কত কষ্ট বুকের মাঝে
পাখির সুরে অমন বাজে
দেখিস না তুই
বুঝিস না তুই
আড়ি তবে – যা – পালা –
খেলব’ না আর – ডাকিস মেলা –
আবার কবে আমায় ফেলে –
মায়ের কোলে যাবি চ’লে!
ফুলকুমারী ফুলকুমারী –
তোর সাথে আজ সত্যি আড়ি -||

Announcements

  • আপনাদের আশীর্বাদে আমাদের এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ অষ্টম বর্ষ অতিক্রম করলো। আমরা আমাদের এই site টি নতুন ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করলাম। আপনাদের মতামত জানান আমাদের email এ (info@amarbanglakobita.com)। বিশদ জানতে contact us menu দেখুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
  • আনন্দ সংবাদ! আমাদের এই site এ এবার থেকে গল্প, অনু গল্প, প্রবন্ধ ও উপন্যাস প্রকাশিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।

Recent Comments

Editorial Choice