দিন বুঝি শেষ হলো তবে!
পাকাধান-গন্ধ টেনে নেবো বুকে
নবান্নের আগে………
ভেবেছিলাম এ অভ্যাস আবহমান
কাস্তে…… লাঙল……জল আর
ফসলের গান ……
এক ফসল উঠে গেলে,
জমির লাগে নতুন রূপটান…
গর্ভে আবার পরের সন্তান…
নিকোনো উঠোনে আল্পনা
পৌষ লক্ষ্মীর পা আঁকা আঙিনা …
এখন ধান কাটা শেষে
বাতাসে পোড়া গন্ধ ভাসে!!
মাঠে মাঠে জ্বলে মৃত ধানগাছের শব !
হা ঈশ্বর!!! এও সম্ভব!!
হঠাৎ ধেয়ে আসা উচকিত স্বরে
এখন আর চমকে উঠি না,
পরিবর্তে একটা স্বস্তি বোধ হয়, –
গলা তুলে অস্বস্তি জানান দেবার
শক্তি, তবে এখনো আছে !
নিঝুম বনানীর গভীর প্রদেশ
সজীব রয়েছে, বোঝার জন্য –
স্তব্ধতাভেদী এমন গর্জন
মাঝে মাঝে শোনা জরুরি।
নিস্তরঙ্গ প্রবাহ সচকিত করে
শুশুকের দল মাথা না তুললে,
জীবন নদীর গতি ধারায় –
প্রাণ খুঁজে পাওয়া ভার।
বহুপূর্বে, এমন অতর্কিত শব্দ –
আকাশ – মাটি – জল চমকে
স্ফুলিঙ্গ হয়ে ছড়িয়ে পড়ত,
অরণ্যে অরণ্যে দাবানল ঘটাতো।
আজ বয়সের ছাইয়ে ঢেকেছে
অতীত তেজের সব শিখা।
তবুও, অঙ্গারের লাল আভায়
বুঝি, আগুনটা এখনো আছে।
আমাকে খুঁজে নেয় – কালরাত্রি আর
জলন্ত লাভার উত্তাপ।
আমার গাল ছুঁয়ে – বারুদের গন্ধ,
ভূমিষ্ঠ শিশুর অভিশাপ।
নখ আমার বিষধর – নাগসর্প ভেজা কেশ,
পঙ্কিল আবর্তে জড়ানো –
বিগলিত অশ্রুর মতো – অভিশাপ বাতাসে,
নিষ্ঠুর দু হাত বাড়ানো।
তোমাকে লিখতে লিখতে যদি –
দৃশ্যতই ভালোবাসি – কোনো একদিন,
শোধ দিয়ে যাবো – খরচের হিসাব,
শোধ দিয়ে যাবো সব ঋণ।
সব ঋণ শোধ হয় না।
সচেতন গণিতের নির্ভূল পথনির্দেশ
পৌঁছে দেয় না দিগন্ত প্রসারী
সবুজ সে সম্পর্কের অসীমতায়।
মাটির স্তন্যে আজন্ম লালিত
গাছ, চিরঋণী থেকে মৃত্যুতে
মাটিতেই আশ্রয় ভিক্ষা করে।
মাটিও রাখে না ঋণের হিসাব,
অবিরাম, অনন্ত সুধা ক্ষরণেই
তার যে অপার আনন্দ !
যার ভালোবাসায় স্নিগ্ধ হয়ে
ঋণী ভাবছো নিজেরে,
সেও বুঝি ঋণী হয়েছে
অন্তরে, তোমায় সিক্ত করে।
তবু নিশিভোর সাধনা অন্তে
থাকে, উত্তরাধিকারের ঋণ –
শতাব্দী পেরিয়ে ভাষার কাছে;
আমৃত্যু শোধের পর,
প্রারব্ধের ভার তখন দিয়ে যেতে হয়
আগামী কবির হাতে।
কবির কলমে :-
(প্রারব্ধের ভার বাবা দিয়ে গিয়েছেন হঠাৎই। বাবা হয়তো জানতেন না, আমার কবিতা চর্চার গোপন কাহিনী। উৎসাহও কখনো দেননি। হয়তো পচ্ছন্দ করতেন না, বা আমার সীমিত ক্ষমতার কথা জানতেন। বাবা আজ সশরীরে থাকলেও হয়তো সংকোচে দেখাতে পারতাম না। এখন আর দ্বিধাটুকু নেই। মৃত্যু তার সীমানা মুছে দিয়েছে। " প্রারব্ধ" তাই তাঁর কাছেই ঋণী থাক। )
অনেক পুড়েছি আমি – আহিরীটোলা বা শিবপুর,
শুধু যা আলিঙ্গনটুকুই বাকি।
হিসাব নেবার মতো যথেষ্ট বৃদ্ধ আমি –
যে হিসাবটুকু বাকি – মুক্তি দিক সে আমায়।
পুড়তে পুড়তে কত রং দেখেছি;
শুধু হলুদ স্বপ্নের মতো – পানীয় – আরো ঘন হয়ে এলে মস্তিষ্কে –
কি এক দুর্বোধ্য প্রেম জেগে ওঠে।
মনে হয় পাড়ি দিই আরো হাজারটা বছর।
মনে হয় পুড়িয়ে দিই – আমার – পোড়া এই যন্ত্রনা,
হঠাৎ কেমন যেন স্বপ্ন হয়ে যায় সব –
আমি – তুমি – আর এই পোড়া যন্ত্রনা।
বিকালের হলুদ আলোয় –
ঘরে ফেরা পরিযায়ী পাখিদের ডানার রঙে –
আবার বাঁচতে ইচ্ছে করে।
– আবার হাজারটা বছর।
Recent Comments