আদিম গুহার অন্ধকার দেওয়ালে
পৃথিবীর প্রথম শিল্পীর আঁচড়ে মিশে আছে বলিরেখা ।
অন্দিতে সন্ধিতে গাঁথা অভিঞ্জতা নদী
অসম্ভবের কাহীনি গর্ভে নিয়ে
বয়ে যায় অজানা গন্তব্যে ।
নদী মেশে নদীতে| শেষ নেই কোনো ।
মাঝে মধ্যে চলকে ওঠে অভিঞ্জতা ।
ভিজিয়ে দেয় পাড়ের কালো বালি ।
জটিল-কাদা-কাদা-সোঁদাগন্ধ ভরা ।
পাতাঝাঁঝি, প্ল্যাঙ্কটন আর সবুজ
সৃষ্টি করে থমথমে রহস্য ।
পিচ্ছিলতার কারণে রহস্য-সংক্রমণ হয় ।
জরা আর বলিরেখার এখানেই মিল ।
দুজনে জবুথুবু বসে দূরে চেয়ে থাকে নিষ্পলক ।
একটা ছবি ক্যানভাসে ফুটে ওঠে ।
সূর্যাস্তের সূর্য ডোবা
অথবা- শেষ সূর্যরশ্মি ।
আমি আছি, হ্যাঁ
সকালের হালকা হাওয়ার সুড়সুড়িতে আমি আছি
মুক্ত বেণীর মায়াজালে আমি আছি
শান্ত জলের চকিত প্রতিবিম্বে আমি আছি
গহন মেঘের কম্পনে আমি আছি;
আমি থাকি ওই ঘন কালো চোখের মণিতে
মণি থেকে উপচে পড়া অশ্রুতেও আমার বাস,
হোক অট্টহাসির গর্জন বা হোক চাপা ঠোঁটের কোণে থাকা লাজ
হোক শতাব্দী পুরানো প্রাসাদ কিংবা নবীনতম উদ্ভাবন
তাতেও আমি নিজেকেই পাই;
দূর পর্বতের বুক চিড়ে যখন রক্ত লাভা বেরোয় তখন
আমার বুকে থাকা চাপা ক্ষোভ মুক্তির উল্লাসে মেতে ওঠে,
মহাসমুদ্রের উদাত্ত গর্জন যখন আকাশের বুক চিড়ে ফেলে তখন
আমারই প্রতিবাদ ধ্বনির কল্লোল মাত্রা পেয়ে থাকে
সহস্র আকুতির কণ্ঠ যখন এক ছাদের নীচে এসে
“candle light march” করে সেই আকাশচুম্বী ধ্বনির প্রতি স্পন্দনে
আমি আছি।
আমি আছি, হ্যাঁ
ছোট্ট শিশুর আলতো ছোঁয়ায় আমি আছি
মুমূর্ষুর শেষ ইচ্ছায় আমি আছি
আশীর্বাদী পুষ্পের অংশ আমি,
অভিশপ্ত গরলের যন্ত্রণা!
প্রতি দিনে, প্রতি ক্ষণের, প্রতি মুহূর্তের
আমাতে আমি থাকি,
ভব্য ভবিষ্যতের
তোমাতে আমি থাকি;
হাজার সাগর পেরিয়ে, সময়ের যবনিকা ভেদ করে
দুঃখ আর উল্লাসের মহাযাত্রা পার করে আমি ফিরব
সেই মাতৃক্রোড়ে ॥
আমি ও রাত্রি পরস্পর পরস্পরের মুখোমুখি
আমাদের যৌথ অস্তিত্বের নীরব সাক্ষী হয়ে
ছাদের কার্নিশে শুয়ে আছে আমাবস্যার চাঁদ,
আমার চোখে মদির চোখ রেখে মুচকি হাসছে
রাত্রির সাথে একরাতের গোপন ভালোবাসা
রাতের স্বল্পদৈর্ঘ্য আয়ু বিরতিহীন ছুটে চলেছে
একঘেয়ে ঘড়ির কাঁটার পুরনো বৃত্তাকার পথে
ঘড়ির কাঁটায় এখন রাতের প্রথম প্রহর …
রাত্রি এখন কিশোরী মেয়ের মত উন্মুক্ত
ঘড়ির কাঁটায় এখন রাত্রি দ্বিপ্রহর
রাত্রি এখন ভরা নদীর মত পূর্ণ যৌবনা …
ঘড়ির কাঁটা এখন রাত্রি তৃতীয় প্রহরের ঘরে …
স্বপ্ন ভঙ্গের মত রাত পোহাবার এখনো অনেক দেরী …
ঘড়ির কাঁটা এখন রাত্রির শেষ প্রহর গুনছে
বার্ধক্যের মত রাত্রি এখন অন্তিম পথের যাত্রী …
ঘড়ির কাঁটায় রাত্রি শেষের সফেদ ঘোষণা
নিয়ে সগৌরবে ফিরে এলো সাত সকাল …
রাত্রির সাথে কথা এখনো অনেক বাকি …
রাত্রি কেবলই নাগালের বাইরে চলে যায় …
কথাই কেবল বাকি থেকে যায় …
বালুচরী ঘাগরা পরা পাহাড়ি মেয়েদের মরাল গ্রীবা
ছুঁয়ে পৃথিবীর বুকে তখনো সন্ধ্যা নামেনি আলোর
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার উদযাপনে আয়োজকের ভূমিকায়…
আকাশের নীল চোখে চোখ রেখে সগর্বে দাড়িয়ে থাকা
দেবদারু গাছের পাতারা তখনো সাঁঝের আঁধারের
প্ররোচনায় বিসর্জন দেয়নি তাদের সবুজ সতীত্ব …
উদরপূর্তির খাদ্য ও প্রজননের জৈবিক তাড়নায় বেঁচে
থাকা খেচরেরাও আলোকিত দিনের সঞ্চয় শেষে আঁধারের
আহ্বানে তখনো তাদের নীড়ের উষ্ণতার আলিঙ্গনে ফেরেনি …
সমস্ত অতীত পিছুটান নিঃশেষে মুছে দিয়ে আয়েশকে সুখ
ভেবে স্বার্থপর ভাবনায় হৃদয় ভাগ করে তোমার নির্বিকার চলে
যাওয়ার শূন্যতায় নিমগ্ন আমার একান্ত চেতনার এই বিকেল
তবুও কেবলই বরফ যুগের মৃত স্মৃতির শ্বেত বিগলিত প্রস্রবণ …
হৃদয়ভাঙা কাঁচবৃষ্টি শেষে করাল মৃত্যুর মত এমনই এক
পরিত্যক্ত পাথর বিকেলের বিষণ্ণ ছায়াপথ মাড়িয়ে
চঞ্চল মৃগয়া শরীরের উপহার নিয়ে বহুজন্ম পরে
তুমি আবার ফিরে এলে আমার শীতলতার বাহুডোরে…
যে ঠিকানা একদিন আমাদের একান্ত নিজস্ব ছিল,
যে ঠিকানা একদিন আমাদের সুখের ঠিকানা ছিল,
যে ঠিকানা কেবল আমাদেরই থাকার কথা ছিল,
হৃদয় ভাগ করে নিয়ে তুমি সব এলোমেলো করে সে
ঠিকানা পেছনে ফেলে একদিন তুমি চলে গিয়েছিলে
আজ কর্পূর সুখের ডানা ভেঙে বড় বেশী অসময়ে,
বড় বেশী দেরী করে, বড় বেশী অনাহুতের মত
পরাজিত হৃদয় নিয়ে অন্তিম আশ্রয়ের খোঁজে তুমি
ফিরে এলে আমার অসহায় একাকীত্বের কাছে,
এখানে আজও তোমার ফেলে যাওয়া মৃত সংসার আগলে
রেখে বেদনাসিক্ত স্মৃতির সাথে আমার একান্ত বসবাস,
এখানে শারীরিক বেঁচে থেকেও তুমি এক মৃত ভাবনার নাম,
এখানে মৃত পেন্ডুলামে সময় থেমে আছে বহু জন্ম ধরে,
এখানে আজ বরাহুত সুখের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ,
এখানে আজ আর কোন স্বপ্নের রসদ বেচে পড়ে নেই ।
Recent Comments