Tag: Galpo

নিষিদ্ধ শব্দে

গৌরচন্দ্রিকায় বড় কাল ব্যয় হয় ।
রাত একটু নিশুতি হলে
কত অনিয়ন্ত্রিত শব্দ আসে – স্বপ্নের মতো
ধাতব যান্ত্রিক – গলিত সুখ বোধ অথবা অস্ফুট গোঙানি –
অভুক্ত শ্বাপদের ম্রিয়মান শীৎকার –
নিস্তব্ধ অন্ধকার – দীর্ঘ নিঃশ্বাসে – বুক ভারী হয়ে আসে।
কালপেঁচা উড়ে যাওয়া – এই সব রাতে – দ্রবীভূত কিছু
মাতালের মতো ঘুম ঘুম স্বপ্নের জট।

পাতায় পাতায় লেখনীর প্রস্তুতি – কাল ভোর হওয়ার আগে
নিয়তির চাপা আক্রোশের মতো – লালায়িত জিহ্বার
নিদারুন উচ্ছাস।
অনেকটা কাছে গেলে – সেই ধ্রুবতারা – কালপুরুষ ছেড়ে
অনেকটা কাছে গেলে –
এরকমই অনেকটা – ফেনিল রক্তিম কিছু আঁচড়ের শব্দ
ভিড় করে – অনন্ত আকাশ জুড়ে।

সেই নিষিদ্ধ শব্দের রঙে – কিছু পুবের হাওয়া –
দুহাতে – আঁচলে – শরীর ঢাকে ব্যস্ত শব্দেরা সব।
রাত ভোর হলে- কুয়াশায় – হাওয়ায় হাওয়ায় –
কাঁচা মাটির ভিজে যাওয়া নরম মনের মতো –
অথবা – এলো চুলে আগাছার অতৃপ্ত জঙ্গল –
মোমের মতো খুঁটে খাওয়া জমাট জোৎস্না।
এসব ফেলে আর ঘুম আসে না –
ঘুম আসে না বড়।

শেষ অধ্যায়

আজ প্রদীপের বড্ড মন ভার
এলোমেলো চাউনি – থরথর করে কাঁপছে।
চোখের তলায় কালি জমেছে
গাল ফুলিয়ে – চোখ রাঙিয়ে – বসে আছে সে।
রোজ সন্ধ্যায় – খুকি যে গল্পটা পড়ে –
আজ ছিল তার শেষ অধ্যায়।
গল্প – তা – সে
মোটামুটি – একই রকম –
কিন্তু – এই সন্ধ্যা থেকে রাত হওয়ার বয়ঃসন্ধি কালে –
সেই গল্প – মনে হতো – ঠাকুমার কোলে কোনো আরব্য রজনী।
দু হাতে যতটা সম্ভব অন্ধকার ঠেলে রেখে –
মন দিয়ে শুনতো সেই গল্প- প্রদীপ।
তারপর –
বয়ঃসন্ধি – পেরিয়ে –
রাত গভীর হলে – নিভে যেত সব –
শুধু তেল পোড়া – মিষ্টি ধোঁয়ার গন্ধে ডানা মেলে উড়ে যেত সে –
সেই – অচিনপুরে – সেই রাজকুমারী –
সেই ঘুমপাড়ানি সোনার কাঠি – রুপোর কাঠি –
ঘোড়ায় চড়া রাজকুমার –
তারপর –
– ঘুম নেমে আসত – পৃথিবী জুড়ে -।

আজ সেই গল্প শেষ হয়েছে –
আজই ছিল শেষ অধ্যায় -।

রোহিঙ্গা

হায় রে শিশু – হায় রে কিশোর
কোথায় জ্বলে – তোর ঘরদোর ।
কোথায় পড়ে আম্মি তোদের
কোন নদীতে হয় গো কবর
কোন বেয়নেট – ছিন্ন করি
আব্বু তোদের – বেহেস্ত পাড়ি ।
কণ্ঠ তোদের – রুদ্ধ করি
পালিয়ে যা তুই সে দেশ ছাড়ি।
তবুও যদি তর্ক করিস
আগুন তবে – পুড়িয়ে মারিস –
যুগ যুগান্তে – একটাই দল
যেভাবেই হোক – ক্ষমতা দখল –
এই ধর্ম – এ দেশ আমার
এই পৃথিবী আবার আমার -।

এই ধর্ম – এ দেশ আমার
এই পৃথিবী আবার আমার –
এতটা আকাশ – এতটা বাতাস –
এই জমিটা – ঐটুকু শ্বাস –
সব টুকু চাই – সব টুকু চাই –
নইলে এবার – শব টুকু চাই –
আমার কালি – নিয়ম আমার
আমার চাবুক – বলবে এবার –
তোর দুনিয়া? – ছিলই কবে !
টুকরো রুটি – এতেই হবে –
(তোদের) অতীত যতই – হোক পুরানো
নয় আমাদের – নয় ওদেরও –
গুনতিতে যে – অনেক বড় –
এই নিয়মেই – আমরা দড় – ।
এই নিয়মেই – চলতে হবে
এই নিয়মেই – মরতে হবে।
(এই) নিয়ম মেনেই – মৃত্যু মিছিল
যুগ যুগান্তে – হয় না শিথিল -।

(Please Note: We are not intended to heart any religious or any community. They might come significantly into purview. If so, we are extremely sorry for that.)

কেন প্লাবন আসে

আমিও তবে ক্লান্ত বুড়িটির মতো
দেহভারে ন্যুব্জ – বৃদ্ধা – অবসন্ন -।
ব্যাপ্তি আমার ধূসর পান্ডূর –
পথভারে রক্তিম -।
বাঁধটুকুর চিহ্নমাত্র নেই কোথাও।

শ্রাবনে বুকে আমার
শৈশব, কৈশোর – খেলা করে – ছবির মতন।
গ্রীষ্মে উত্তপ্ত নিঃশ্বাস – হাহাকার – বুক জুড়ে –
দেহাতি মিঠে রোদে মনে পড়ে – শীত এসে গেছে।
পরিচিত পরিযায়ী পাখিদের একটানা স্তব –
শীর্ণ শরীরে আমার –
অবিরাম অবিশ্রান্ত – ক্লান্তিহীন – সময়।

একদিন আমাকেও চলে যেতে হবে –
ইতিহাস মেনে নেবে সব –
আরো কত পথ – কত সময় -।

তবু বুকে যদি হঠাৎ কোনো প্লাবন আসে –
তিস্তা – তোর্সা – অথবা জলঢাকা নদীটির থেকে –
ফিরে আসা – হঠাৎ কোনো প্লাবন বলে –
চলো চলে যাই – আবার দুহাতে দুহাত ধরে –
দেশ – গ্রাম – জনপদ ছেড়ে – অমৃতের সন্ধানে -।।

মেয়েটা ফিরে আসেনি (বিনয় চন্দ্র দাস)

মেয়েটা যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিল-
বাবার দিকে একটু লক্ষ্য রেখো মা
ভাই যেন ঠিকঠাক পড়াশুনা করে;
আরও বলেছিল- তোমাদের ছাড়া থাকতে পারবো না আমি…
ওর বিদায় লগ্নে –
শঙ্খ আর উলুধ্বনির তরঙ্গের সাথে
ভেসে গিয়েছিল আমাদের অব্যক্ত ব্যাথা দুর-দুরান্তে!
ভাবতে অবাক লাগে-
একটা মেয়ে রাতারাতি কেমন করে
এক নারীতে পরিনত হয়।

মেয়েটার কথামত লক্ষ্য করতে গিয়ে দেখেছি
লোকটা ক্রমশ পাথরের মতো নির্বাক – নিরুৎসাহ,
জীবনের সব সুখ আনন্দ …
গ্রীষ্মের ডোবা পুকুরের জলের মতো
হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।
ছেলেটা – ছেলেটা দিদির সংসারে সুখের জন্য
পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে
একটা মুদীর দোকানে কাজ করে।

মনে পড়ে-
ওরা যখন অষ্টমঙ্গলায় এসেছিল-
দারুন উৎফুল্ল ছিল মেয়েটা,
খুশীতে মুখখানি যেন পুর্নিমা চাঁদের মতো উজ্জ্বল
পাহাড়ী ঝর্নার মতো কল্লোলিনী সে।
যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিল-
আমি খুব ভাল আছি মা।

তারপর ছ’মাসের মাথায় যখন এলো-
যেন চাঁদের গায়ে ছাপ ছাপ অন্ধকার
অনেকটা মলিন – ম্রিয়মান সে।
আমার কানপাশা জোড়া দেখতে না পেয়ে বলেছিল-
ওদের জন্য আর কত করবে মা?
যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিল-
ওখানে আর ভাল লাগে না…

এক বছরের মাথায় মেয়েটা একাই এসেছিল;
তখন একেবারে বিধ্বস্ত-হতাশ,
লাল নীল হলুদ পছন্দের কয়েকটা শাড়ী
কিছু গয়না রেখে দিয়ে বলেছিল-
ও গুলো আর ভাল লাগে না মা ।
যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিল-
আর কবে আসবো জানি না…

মেয়েটা আর কোনদিন ফিরে আসেনি-
শুধু একটা ফোন এসেছিল…
মাঝরাতে কিংবা ভোরের আগে।
সেদিন হয়তো আর ভোর হয়নি-
ভোরের পাখীগুলি আর কলোরব করেনি।
শুধু একটা কাক ডাকছিল ছাদের কার্নিশে
বুকটা আমার ব্যাথায় ভেঙে যাচ্ছিল!

মেয়েটার জীবনে আর কোনদিন ভোর আসেনি-
ভোরের আলো ফোটেনি।
মেয়েটা কোনদিন আর ফিরে আসেনি-
কোনদিন আর কিছু বলেনি…

Announcements

  • আপনাদের আশীর্বাদে আমাদের এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ অষ্টম বর্ষ অতিক্রম করলো। আমরা আমাদের এই site টি নতুন ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করলাম। আপনাদের মতামত জানান আমাদের email এ (info@amarbanglakobita.com)। বিশদ জানতে contact us menu দেখুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
  • আনন্দ সংবাদ! আমাদের এই site এ এবার থেকে গল্প, অনু গল্প, প্রবন্ধ ও উপন্যাস প্রকাশিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।

Recent Comments

Editorial Choice