স্মৃতি, তোর চুল ময়ূরাক্ষীর কাক কালো জল,
আমার খেয়া শুধু বারবার ডুবে ডুবে যায়,
আমি বারবার হেরে যাই নিজের কাছে,
আমি বারবার হেরে যাই সময়ের কাছে,
আমি বারবার হেরে যাই নিয়তির কাছে,
তবুও তুই প্রবহমান, স্রোতস্বিনী, তেজস্বিনী ।
স্মৃতি, তোর দুচোখ নিঃসীম নির্নিমেষ নক্ষত্রবীথি
আমার কবিতার খাতা ছিঁড়ে তৈরি হয় কাগজের
খেলনা এরোপ্লেন, হাওয়ায় হাওয়ায় উদ্দাম উড়ে,
সে এরোপ্লেন কখনো পায়না তোর ছায়াপথের দেখা,
একসময় ক্লান্ত হয়ে সে ঝড়ে পরে ভূমি শয্যায়,
তবুও তুই থেকে যাস নিঃসীম নির্নিমেষ নক্ষত্রবীথি।
স্মৃতি, তোর হৃদয় অনতিক্রম্য অনন্ত মহাকাল,
আমার হাহাকার নিঃশেষে মিশে যায় স্তব্ধ
সাগরের বুকে ঝরা এক ফোঁটা বৃষ্টির মতো,
আমার বুক থেকে উঠে আসা দীর্ঘশ্বাসের পথ
বেয়ে ধরণীতে নেমে আসে বাঁধভাঙা অশ্রু প্লাবন,
তবুও তুই থেকে যাস অনতিক্রম্য অনন্ত মহাকাল ।
দূর ঐ দূর প্রান্তে দাঁড়িয়ে তুমি
আমি এ প্রান্তে
হালকা হালকা মিশে যাচ্ছ' দূরে
তোমার আলতার পায়ের রেখা
এখনো হেঁটে চলছে
বন্ধ চোখে আমি তোমায় কাজল পড়িয়েছি
কোথায় যাচ্ছ চলে ?
বলে গেলে না !
ভিজিয়ে গেলে আমায়
একুশ বসন্ত কাটিয়েছ' আমার সাথে
একুশ বার তোমার গালে হলুদ রং— ঢেলেছি নিজের ক্যানভাস করে
এরকম ভাবে সব মুছে চলে যাচ্ছ' !
আমার অকৃতজ্ঞ হাত এখনো তোমার- মুখ ধরে আছে
একটু চেয়ে দেখ !
তোমার আচলে আমি বাঁধা
সেই গাঁটকে এইভাবে মিথ্যে বলছ?
আমার আত্মজীবনী লেখা রইল—
ঐ শেষ গাঁটে
ছিঁড়ে চলে গেলে তুমি
শুধু রইলো ঐ টুকরো
চোখে কাজল গায়ে বেনারসি পড়ে তুমি- এগিয়ে যাচ্ছ'
এক ফোঁটা জল ধার দিয়ে গেলে না
সবইত' নিয়ে গেলে ঐ গাঁটে
বসন্তকে কুয়াশা চড়িয়ে
দূর ঐ দূর প্রান্তে দাঁড়িয়ে তুমি
আমি এ প্রান্তে
মোনালিসা, তোমার করতলে আমার সকল স্বপ্ন-সাধ
অথচ তোমায় নিয়ে কবিতা লিখে যায় নিশুতি রাত,
মোনালিসা, যদি ফিরিয়ে দাও, ব্যর্থ হয়ে যাবে জীবন
তবুও তোমায় নিয়ে কবিতা লেখে বুড়ো নির্মলেন্দু গুণ ।
মোনালিসা, এই চোখে তুমিই সব সৌন্দর্যের উপমা
অথচ তোমাকে নীলের মায়ায় জড়ায় ঐ দূর নীলিমা,
তোমার নামে ভরা কবিতার খাতা থেকে বাজারের ফর্দ
তবুও তোমাকে আঁকে বজ্জাত দ্য ভিঞ্চি লিওনার্দো ।
মোনালিসা, ছিলে, আছো, থাকবে আমার সুখের স্বপন
অথচ তোমার নিজস্বতায় আমার জন্য নেই কোন স্থান,
মোনালিসা, তুমি আমার স্বপ্ন দেখার রঙিন আতস কাচ
তবুও তোমার নামে লক্ষ পৃষ্ঠা খোঁজে পাজি গুগল সার্চ ।
মোনালিসা, তোমাকে ঘিরেই আমার যত আকুলতা
অথচ তোমার হৃদয়ে আজ শুধুই তুষারের শীতলতা,
মোনালিসা, তোমাকে নিয়ে ধরেছি সর্বস্ব বাজী আজ
তবুও তোমাকে বাহুডোরে জড়ায় পরবাসী ফাইয়াজ ।
মোনালিসা, তোমার জন্য আমার সকল কান্না হাসি
তবুও প্রিয়তমা, বলতে পারিনা কতোটা ভালোবাসি,
মোনালিসা, ভালোবাসি বলে আমি ফিরে আসি বারবার
অথচ তোমার কবিতার পাতায় আজ আমি ছারখার।
মোনালিসা, তুমি ছাড়া আমার নিজস্ব ক্যানভাস বর্ণহীন
তবুও তোমায় চেয়ে চেয়ে দেখে ঐ বেহায়া সূর্যের দিন,
মোনালিসা, শুধু তোমার জন্য আমার সব কষ্ট জমা
তবুও তোমায় আজকে না হয় করেই দিলাম ক্ষমা ।
দূর সেই সীমানা পেরিয়ে তুমি
আমি আছি সীমানার ধারে
মাঝে পদ-চিহ্নহীন আলোক পথ।
মধ্যরাত্রে ভারি শীতল বায়ুর কাছে
একা হয়ে পরেছি আজ
শূন্যতা সঙ্গই বলে আমায়
কিন্তু আমি সেই সম্পর্ক চাই না।
তোমার সাথে থাকা সেই স্নিগ্ধ-বায়ু বয়ে চলে এখন আমার দেশকাল জুরে
তুমি কি এখনো সেইরকম ই আছো?
তুমি যদি থাকতে এখনও কি —
আগের মতন রাতের বৈশিষ্ট্য পূরণে সাহায্য করতে?
জানি না!
জানো,দূরের সেই পলাশের গাঢ় রক্ত-লাল
আবছা হয়ে গেছে আজ।
আজ আর ধরা দেয় না
নদীর বুকে রৌদ্রের শেষ আভার সাক্ষী হয়ে যে পারে আমি আর তুমি বসতাম
সেই পার,এখন তীব্র অপেক্ষায় আছে
আমাদের দুজনের।
যে কবিতার বন্যা তুমি আমায় দান করেছিলে,সেই ভাবাবেগ কোথায় যেন আজ উবে গেছে।
যে চাঁদকে তুমি আমায় নতুন করে দেখতে শিখিয়েছিলে,সেই মায়া আজ কোন অলিক মেঘে ঢাকা পড়ে গেছে।
এই ব্যবধানের কোন শুরু নেই,
নেই কোন শেষ।
তবু,আজও পুরনো সেই স্মৃতির ধুলো বালি দিয়ে,আরও বেশী জড়িয়ে নিয়েছি তোমাকে ।
আজও ধরে রেখেছি সেই স্মৃতিগুলিকে
এই নিঃস্ব পাতায়।
রাগ অনুরাগের স্বপ্ন-মেদুর রঙে অকাতর হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া
শাশ্বত ভালোবাসা আজ বিলাপ-হীন জীবন যুদ্ধে অসহায়
পরাভূত হয়ে সস্তা নাগরিক বিনোদনের নির্লজ্জ কাঁচুলি পরে
কষ্টে মুখ লুকায় সিনেমা-স্কোপের বাণিজ্যিক মিথ্যাচারের আচলে ।
সময়ের চেয়ে দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ক্লান্ত মানবিক বোধের প্রাচীন
ধূলিধূসর ধ্যান ধারনা আজ ক্ষতবিক্ষত হয়ে ক্রমশ বদলে যায় নব্য
সময়ের গতিশীল স্বার্থপর চাহিদার সীমাহীন স্পর্ধিত উস্কানিতে ।
উশর আধুনিকতার অন্তহীন রেসকোর্সর ঘোড়দৌড়ের
মাঠে খালি পায়ে পথ হেটে চলা সাদা ধবধবে অথর্ব বিবেক
বুড়োকে অবলীলায় কক্ষচ্যুত করে বিপুল গৌরবহীন
বিজয়ে সমাসীন হয় সমসাময়িক ঊর্ধ্বগতি বাজারদর ।
সামাজিক বন্ধন শিকলে আবদ্ধ মানুষের পারস্পরিক
সম্পর্কের স্থানাঙ্ক নির্ধারণে হৃদয়ের মানবিক স্থান অকস্মাৎ
জবরদখল করে নেয় হিসাব নিকাশের ডিজিটাল নিক্তি ।
সবকিছুর পরেও পুরনো লাল সূর্যটা একই থেকে যায়,
বরাবর আলোর বর্ণীল পসরা সাজিয়ে রাখে শর্তহীন ।
কেবল লাল সূর্যের নিচে কিছু মানুষ রয়ে যায় আলোহীন,
কেবল লাল সূর্যের আলোয় কিছু মানুষ বদলায় অনুতাপহীন,
সূর্যের বিপুল প্রেক্ষাপটে কিছু মানুষ কেবল নগণ্য হয়ে যায়,
অনন্ত সূর্যের নিচে কিছু অন্ধকার মানুষ কেবল সূর্যের উদার
আলোয় আলোকিত হয় না, আত্মার অতল গহীনে জমে থাকা
মৃত্যুর চেয়ে কালো আঁধার ঘোঁচে না সূর্যের অমেয় আলোয়।
Recent Comments