Tag: Bangla Kobita

নদী (শুভেন্দু ধাড়া)

নদীর সাথে আমার অনেক দিনের ভাব ছিল,
সে খুব কবিতা ভালবাসত ।
আমি তার মন রাখতে চরে বসে বসে এক এক পাতা
লিখতাম আর ভাসিয়ে দিতাম তার বুকে ।

কবিতারা ভেসে যেত
সারি সারি নৌকা দুলতে দুলতে  মিশে যেত তার অন্তরে ।

বেশ চলছিল, এভাবেই ।
কিন্তু এক্দিন রাতে কিছুতেই ঘুম আসছিল না চোখে
কেবলই মনে হচ্ছিল কে যেন আমায় ডাকছে
নিশির ডাক, পারলাম না এড়াতে,
মহাশ্মসানের অন্ধকার প্লাবিত পথে পা রাখলাম

পায়ে পায়ে অবশেষে পৌছে গেলাম সেই চরে,
            নদীর পাড়ে ।

নদী সেই রাতে ঝরনার সুরে বেজেছিল অচিন ছন্দে ।
            জোনাকির আলোকমালায়
আমি পৌছতেই সে অপেক্ষার অস্থিরতায় আছড়ে পড়ল বুকে ।
ভাসিয়ে নিয়ে গেল মাঝদরিয়ায়, সাঁতার জানতাম না,
আমি ডুবে গেলাম, আবার ভেসে উঠলাম, এইভাবেই
হাবুডুবু খাছ্ছি আর কানে কানে শুনছি, “আজ থেকে
তুমি শুধু কবি রইলে না আর,
আজ থেকে তুমি সাগর, সাগর আমার “।

সেই রাতের পর ছয় ছটা দিন
কেটেছে নিদ্রাহীন,
বেসামাল আমার খাতার পাতা , শব্দরা ভবঘুরে দিশাহারা
কিছু হাতে আসে  কিছু অধরা
তবুও নদীর জন্য অনেক কাটাকুটি শেষে
একটি মাত্র পাতা সেজেছিল কবিতার বেশে ।

কিন্তু একি !
সাত দিনের বেলায় গিয়ে দেখি

কোথায় নদী ! কোথায় ঢেঊ !কিছুই যে নেই আর
জল স্থির সবুজ, যেন সে নদী নয়, সে নিয়েছে দিঘীর আকার
আমি চিৎকার করলাম ‘ ও নদী , তুমি কোথায় গেলে ? আমি যে কবিতা ভাসাতে এলাম ! তুমি কি নেবে না?
কোনো সাড়া পেলাম না, ” নদী , আমি সাগর বলছি তোমার সাগর, তুমি কি শুনতে পাচ্ছো না ?

এবারও কোনও উত্তর আসে না, নদীর মুখে কুলুপ
আমি দাড়িয়ে চরে, পায়ের নিচের মাটি খসে পড়ে জলে ঝুপ ঝুপ ।
জল স্থির, আমি সামনে তাকাই, সামনের ঔ বাঁকে
বাঁধ পড়েছে মস্ত এই চঞ্চলা নদীর বুকে
চোখ জল এলো আমার , ” বাঁধনেই শেষে ধরা দেবে যদি
মিছেই আমি সাগর হলাম, মিছেই ভালোবাসলাম নদী ” !

হঠাৎ আমার ইচ্ছে হল সামলের ওই বাঁধটাকে
কেটেই দিই, ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে নিঃশ্চিহ্ন করি চিহ্নকে
কিন্তু পারি না, ফিরতে থাকি আপনায়, মন নদীতে ছুটে যায়
নদী বন্দী, প্রান হারা, নদী অসহায়
নদীর বুকে অসংখ্য কবিতা, প্রেম, বিপুল শক্তি ধরে,
এতগুলো সৃষ্টিরা যা পারলো না আমি নগন্য স্রষ্টা তা পারব কি করে !

সমন (শুভেন্দু ধাড়া)

(১)

না, এর আগে কখনই সরাসরি দেখিনি,
ভয়, যদি ডুবে যাই তলিয়ে যাই, কেবল আড়চোখে
ঢেউ গুনেছি দূরের তটে বসে ।

এখন আর ভয় নেই, নাই থল !
কি যায় আসে, শিখেছি ভেসে থাকবার কলাকৌশল

কিন্তু আজ ও চোখে চোখ রাখা মাত্রই
আমার হাড়, পাঁজরা মাংসে
        আগুন জ্বলে উঠ্ল দপ করে ।

(২)
না ! ওই সব লিপি সরাও, সরিয়ে নাও,
ওরা দস্যুর মতো আমায় টেনে হিঁচড়ে নিয়ে চলছে
বই পেরিয়ে মাটি পেরিয়ে ঐ গাছ পেরিয়ে
সে এক অদ্ভুত দেশে, যেখানে তোমাকে ছাড়া
আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না ।

(৩)
তারপর থেকে পা টলোমলো,
তারপর থেকে রাস্তা এলোমেলো
অগোছালো বিছানাপত্তর পড়ার টেবিল ।
তারপর থেকেই কোনো কথা নেই, নিরবাক।
তারপর থেকেই তিনশ ষাঠ ডিগ্রি তে ঘুরপাক।

এতো নেশা কি করে সাজাও ঐ এতটুকু পাত্রে!

(৪)
আত্মরক্ষার কলাকৌশল
নিঃস্ফল ।

যদিও বিসর্যন ।
এর পর, জলেও আগুন, আগুনে জল ।
আমার হাতে কিছুই নেই
তোমার সমনটুকু সম্বল ।

কোমা – মমি

পৃথিবীর সব আলো নিভে গেলে –
ধুসর পান্ডুর চোখ করে আয়োজন
জনান্তিকে কালরাত্রি –
পাতায় পাতায় হিস্ হিস্ শব্দ ৷৷

তবু মৃত্যু ছেড়ে মরতে চাই না বড় …
ধ্বংসস্তুপে কোমার মত ৷৷
পিরামিড কর’ আয়োজন –
রক্তলেখা লিখে যাব’ আমি
মিঠেপানি নদীটির তীরে ৷৷

জমাট রক্তের মত
একদিন বেঁচেছিলে যখন
জীবনের ক্লেদাক্তও লাল হয়ে যেত ৷৷

কোনোদিন আর ঘুম ভাঙবে না জেনে
সেই ক্লেদাক্ত পাললিক মমি
রক্তলেখায় …..
লিখে যাব আমি ৷৷

 

In PDF View

Or

Koma – Mami

আজ সারারাত – ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি

অঝোর ধারা বৃষ্টি গোনা
সন্ধ্যা আর আমি
মাঝখানেতে তিতির সোনা
প্রাণ গিয়েছে থামি ৷৷

ওপারেতে মুক্ত আকাশ
মেঘের আনাগোনা
এ-পারেতে মিটিমিটি
উষ্ণ আদর ছোঁয়া,
ওপারেতে কান্না ভেজা
বৃষ্টি মাদল গাওয়া ৷৷
এ-পারেতে মন খারাপি
সিক্ত আগল খোলা
ওপারেতে বৃষ্টি ফোঁটায়
বকুল গাঁথা মালা ৷৷

এ-পারেতে রাজপ্রাসাদী
চুমকি জরি শাড়ী
রাত পোহালেই উড়ে যেও
দূর সুদূরের পাড়ি ৷৷

শুধু আজ সারারাত তুমি আমি
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি
শ্রাবন শেষে তিতির সোনা
কবিতায় অনাসৃষ্টি ৷৷

Or

 

কথা ছিল কাল সারারাত

কথা ছিল কাল সারারাত
এক মাতাল করা ঝোড়ো জ্যোৎস্না
আমার কড়িকাঠ বেয়ে নেমে আসা
ঈষৎ পান্ডুর মেঘ ঝরা সন্ধ্যা
…….আর সেই কোন ছেলেবেলার ভেসে আসা
            কত শত মুখ দেউড়ির খিড়কি দিয়ে
অনেক মুখের থেকে মুখ ধার করে –
            ভোরের আলোয় লাল হয়ে যাবে ৷
                        অনেক মুখের থেকে মুখ
                        ঠিক মানুষের মুখের মত মুখ –

রাত্রির শরীরে মুখ লুকিয়ে অনেক কেঁদেছি আমি ৷৷

অনেক রাত অবধি শুধু শীতল হাওয়া
            শিরশিরে ঠান্ডা হাওয়া….
অনেক কেঁদেছি আমি
তারপর….
ঘুমিয়ে গেছি কখন ৷৷

অদ্ভুত সুন্দর এক ভোর, রমণীর মুখের মত
কখন সে ঠান্ডা বাতাস হয়ে গেছে বসন্ত….. ৷৷
তোমার লাল ফোঁটার মত ভোরে –
            আমি আজও খুঁজে ফিরি ……

অনেক মুখের থেকে মুখ
            ঠিক মানুষের মুখের মত মুখ ৷৷

In PDF View

Or

Katha Chhilo Kal Sararat

Announcements

  • আপনাদের আশীর্বাদে আমাদের এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ অষ্টম বর্ষ অতিক্রম করলো। আমরা আমাদের এই site টি নতুন ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করলাম। আপনাদের মতামত জানান আমাদের email এ (info@amarbanglakobita.com)। বিশদ জানতে contact us menu দেখুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
  • আনন্দ সংবাদ! আমাদের এই site এ এবার থেকে গল্প, অনু গল্প, প্রবন্ধ ও উপন্যাস প্রকাশিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।

Recent Comments

Editorial Choice