Tag: Bangla Kabita

একলা পথে

আমার মন পিয়াসী দুপুর
উদাস দখিন হাওয়া
তার মিথ্যে কপট হাসি –
আর একলা চলে যাওয়া।

আমার দিন শেষে গোধূলি
আর – হঠাৎ সন্ধে নামা
তার মিষ্টি মুখের হাসি –
আর হঠাৎ নিভে যাওয়া।

এবার একলা পথে আমি
আর শূন্য ঘরে ফেরা ।
ঘরগুলো হোক মিছে –
তাই আবার হারিয়ে যাওয়া।

 


 

সোচ্চার​ (সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়)

আমি আছি, হ্যাঁ
সকালের হালকা হাওয়ার সুড়সুড়িতে আমি আছি
মুক্ত বেণীর মায়াজালে আমি আছি
শান্ত জলের চকিত প্রতিবিম্বে আমি আছি
গহন মেঘের কম্পনে আমি আছি;

আমি থাকি ওই ঘন কালো চোখের মণিতে
মণি থেকে উপচে প​ড়া অশ্রুতেও আমার বাস​,
হোক অট্টহাসির গর্জন বা হোক চাপা ঠোঁটের কোণে থাকা লাজ​
হোক শতাব্দী পুরানো প্রাসাদ কিংবা নবীনতম উদ্ভাবন​
তাতেও আমি নিজেকেই পাই;

দূর পর্বতের বুক চিড়ে যখন রক্ত লাভা বেরোয় তখন​
আমার বুকে থাকা চাপা ক্ষোভ মুক্তির উল্লাসে মেতে ওঠে,
মহাসমুদ্রের উদাত্ত গর্জন যখন আকাশের বুক চিড়ে ফেলে তখন​
আমারই প্রতিবাদ​ ধ্বনির​ কল্লোল মাত্রা পেয়ে থাকে
সহস্র আকুতির কণ্ঠ যখন এক ছাদের নীচে এসে
“candle light march” করে সেই আকাশচুম্বী ধ্বনির​ প্রতি স্পন্দনে
আমি আছি।

আমি আছি, হ্যাঁ
ছোট্ট শিশুর আলতো ছোঁয়ায় আমি আছি
মুমূর্ষুর শেষ ইচ্ছায় আমি আছি
আশীর্বাদী পুষ্পের অংশ আমি,
অভিশপ্ত গরলের যন্ত্রণা!

প্রতি দিনে, প্রতি ক্ষণের, প্রতি মুহূর্তের
আমাতে আমি থাকি,
ভব্য ভবিষ্যতের
তোমাতে আমি থাকি;
হাজার সাগর পেরিয়ে, সম​য়ের যবনিকা ভেদ করে
দুঃখ আর উল্লাসের মহাযাত্রা পার করে আমি ফিরব​
সেই মাতৃক্রোড়ে ॥

 


 

রাত্রির সাথে একরাত (হাসান ইমতি)

আমি ও রাত্রি পরস্পর পরস্পরের মুখোমুখি
আমাদের যৌথ অস্তিত্বের নীরব সাক্ষী হয়ে
ছাদের কার্নিশে শুয়ে আছে আমাবস্যার চাঁদ,
আমার চোখে মদির চোখ রেখে মুচকি হাসছে
রাত্রির সাথে একরাতের গোপন ভালোবাসা
রাতের স্বল্পদৈর্ঘ্য আয়ু বিরতিহীন ছুটে চলেছে
একঘেয়ে ঘড়ির কাঁটার পুরনো বৃত্তাকার পথে
ঘড়ির কাঁটায় এখন রাতের প্রথম প্রহর …
রাত্রি এখন কিশোরী মেয়ের মত উন্মুক্ত
ঘড়ির কাঁটায় এখন রাত্রি দ্বিপ্রহর
রাত্রি এখন ভরা নদীর মত পূর্ণ যৌবনা …
ঘড়ির কাঁটা এখন রাত্রি তৃতীয় প্রহরের ঘরে …
স্বপ্ন ভঙ্গের মত রাত পোহাবার এখনো অনেক দেরী …
ঘড়ির কাঁটা এখন রাত্রির শেষ প্রহর গুনছে
বার্ধক্যের মত রাত্রি এখন অন্তিম পথের যাত্রী …
ঘড়ির কাঁটায় রাত্রি শেষের সফেদ ঘোষণা
নিয়ে সগৌরবে ফিরে এলো সাত সকাল …
রাত্রির সাথে কথা এখনো অনেক বাকি …
রাত্রি কেবলই নাগালের বাইরে চলে যায় …
কথাই কেবল বাকি থেকে যায় …

 

 


 

হৃদয়ভাঙা কাঁচবৃষ্টি শেষে (হাসান ইমতি)

বালুচরী ঘাগরা পরা পাহাড়ি মেয়েদের মরাল গ্রীবা
ছুঁয়ে পৃথিবীর বুকে তখনো সন্ধ্যা নামেনি আলোর
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার উদযাপনে আয়োজকের ভূমিকায়…

আকাশের নীল চোখে চোখ রেখে সগর্বে দাড়িয়ে থাকা
দেবদারু গাছের পাতারা তখনো সাঁঝের আঁধারের
প্ররোচনায় বিসর্জন দেয়নি তাদের সবুজ সতীত্ব …

উদরপূর্তির খাদ্য ও প্রজননের জৈবিক তাড়নায় বেঁচে
থাকা খেচরেরাও আলোকিত দিনের সঞ্চয় শেষে আঁধারের
আহ্বানে তখনো তাদের নীড়ের উষ্ণতার আলিঙ্গনে ফেরেনি …

সমস্ত অতীত পিছুটান নিঃশেষে মুছে দিয়ে আয়েশকে সুখ
ভেবে স্বার্থপর ভাবনায় হৃদয় ভাগ করে তোমার নির্বিকার চলে
যাওয়ার শূন্যতায় নিমগ্ন আমার একান্ত চেতনার এই বিকেল
তবুও কেবলই বরফ যুগের মৃত স্মৃতির শ্বেত বিগলিত প্রস্রবণ …

হৃদয়ভাঙা কাঁচবৃষ্টি শেষে করাল মৃত্যুর মত এমনই এক
পরিত্যক্ত পাথর বিকেলের বিষণ্ণ ছায়াপথ মাড়িয়ে
চঞ্চল মৃগয়া শরীরের উপহার নিয়ে বহুজন্ম পরে
তুমি আবার ফিরে এলে আমার শীতলতার বাহুডোরে…

যে ঠিকানা একদিন আমাদের একান্ত নিজস্ব ছিল,
যে ঠিকানা একদিন আমাদের সুখের ঠিকানা ছিল,
যে ঠিকানা কেবল আমাদেরই থাকার কথা ছিল,
হৃদয় ভাগ করে নিয়ে তুমি সব এলোমেলো করে সে
ঠিকানা পেছনে ফেলে একদিন তুমি চলে গিয়েছিলে
আজ কর্পূর সুখের ডানা ভেঙে বড় বেশী অসময়ে,
বড় বেশী দেরী করে, বড় বেশী অনাহুতের মত
পরাজিত হৃদয় নিয়ে অন্তিম আশ্রয়ের খোঁজে তুমি
ফিরে এলে আমার অসহায় একাকীত্বের কাছে,
এখানে আজও তোমার ফেলে যাওয়া মৃত সংসার আগলে
রেখে বেদনাসিক্ত স্মৃতির সাথে আমার একান্ত বসবাস,
এখানে শারীরিক বেঁচে থেকেও তুমি এক মৃত ভাবনার নাম,
এখানে মৃত পেন্ডুলামে সময় থেমে আছে বহু জন্ম ধরে,
এখানে আজ বরাহুত সুখের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ,
এখানে আজ আর কোন স্বপ্নের রসদ বেচে পড়ে নেই ।

আমি এভাবেই তাকাই (হাসান ইমতি)

আমি পুরুষ, আমি এভাবেই তাকাই,
যেভাবে পুরুষ তার প্রিয় নারীর দিকে তাকায়,
যেভাবে পুরুষ তার নারীর চোখে চোখ রাখে,
যেভাবে একজন পুরুষ শুধু চোখের ভেতর
দিয়েই একজন নারীর হৃদয়রাজ্য জিতে নেয়,
এ লালসা নয়, শুধুমাত্র কাম নয়, এ অনন্ত পৌরুষ,
একজন পুরুষ তোমার দিকে তাকিয়েছে নারী,
একজন পুরুষ তোমার চোখের গভীরে চোখ রেখেছে,
একজন পুরুষ চোখ দিয়ে তোমার হৃদয় ছুঁয়েছে,
তোমার যদি নতুন পথে চলতে নিষেধের বারণ থাকে,
কোন পূর্ব প্রতিজ্ঞার শেকলে বাধা থাকে নিয়তির সীমানা,
যদি তুমি অনন্ত অসীমে অকারণ অবিশ্বাস রেখে থাকো
যদি পুরুষের ভালোবাসাকে কেবল বহু যত্নে সাজানো
বাগানের মত পরিপাটি সুন্দরের উৎস বলে ভেবে থাকো,
যদি কামাতুর প্রেমিক চোখের দংশন সইতে না পারো
তবে তোমার নাজুক ও চোখ তুমি ফিরিয়ে নিও নারী,
জেনে রেখো এই অদম্য পৌরুষ তোমার জন্য নয়,
আমি পুরুষ, আমার প্রেমময় চোখের তারায় নারীর
জন্য আছে সুপ্ত আগ্নেয়গিরির দুর্নিবার লেলিহান ।

আমি পুরুষ, আমি এভাবেই তাকাই,
যেভাবে একজন পুরুষ তার নারীর দিকে তাকায়,
যেভাবে সাজানো সভ্যতার কৃত্রিম খোলস ফেলে হৃদয়ের
অকৃত্রিম আহবানে চোখে চোখ মিলে একাকার হয়ে যায়,
যেভাবে চোখে চোখে নির্বাক সব কথা বলা হয়ে যায়,
যেভাবে চোখে চোখে ভালোবাসাবাসির জোয়ার আসে,
সেভাবে একজন পুরুষ তোমার দিকে তাকিয়েছে নারী,
একজন পুরুষ তোমার হৃদয় দুয়ারে কড়া নাড়া দিয়েছে,
যদি তোমার মনে না থাকে উড়াল আকাশের বিশালতা,
যদি দুর্গম যাত্রা শুরুর আগেই তোমার গন্তব্য এসে পড়ে,
যদি বিপুল সাগরের সুনীল গহীনতা মাপার মত দীর্ঘ
কোন গজ-ফিতার সন্ধান তোমার একান্তই জানা না থাকে,
যদি তুমি সাদা চোখ মেলে দেখা দিগন্তকেই শেষ
পরিণতির সীমানা বলে মেনে নিতে শিখে গিয়ে থাকো,
তবে তুমি তোমার হৃদয় দুয়ার বন্ধ করে রেখ নারী,
জেনো এই অনন্ত পুরুষের কাঙ্ক্ষিত আরাধ্য ভূমি নয়
তোমার বিষয় ভাবনায় নিমজ্জিত পরিপাটি হৃদয়-পট,
জেনো এ নিঃসীম মৈথুনের আহ্বান তোমার জন্য নয় নারী,
চেনা পথ ধরে তুমি ফিরে যাও তোমার চেনা ঠিকানায়,
তুমি ভালো থেক নারী তোমার একুরিয়াম বন্দি রঙিন মাছের
ঝাঁক এবং পোষা পাশ বালিশের আলিঙ্গনের উত্তাপে,
আর সত্যিই যদি হয়ে থাকো পুরুষ কল্পনার সেই অনন্ত নারী
সত্যিই যদি হয়ে থাকো চিরন্তন প্রেমিকের শাশ্বত প্রেমিকা,
তবে দৃপ্ত সাহসে তোমার চোখে রাখো এই পুরুষের চোখে,
অনন্ত ভরসায় তুমি চোখ রাখো এই প্রেমিকের চোখে,
যেভাবে একজন নারী একজন পুরুষের দিকে তাকায়,
যেভাবে একজন নারী একজন পুরুষের চোখে চোখ রাখে ।

Announcements

  • আপনাদের আশীর্বাদে আমাদের এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ অষ্টম বর্ষ অতিক্রম করলো। আমরা আমাদের এই site টি নতুন ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করলাম। আপনাদের মতামত জানান আমাদের email এ (info@amarbanglakobita.com)। বিশদ জানতে contact us menu দেখুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
  • আনন্দ সংবাদ! আমাদের এই site এ এবার থেকে গল্প, অনু গল্প, প্রবন্ধ ও উপন্যাস প্রকাশিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।

Recent Comments

Editorial Choice